নূর মো. শাওন মিন্টু, লামা (বান্দরবান)

  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮

লামায় এলোমেলো বিদ্যুৎ লাইন ঝুঁকির মধ্যে শতাধিক পরিবার

বান্দরবানের লামা পৌর শহর ও আশপাশের বসতিপূর্ণ এলাকাসহ হাটবাজারগুলোতে এলোমেলোভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। হাই ভোল্টেজ ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইনগুলো বাসাবাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে ছুঁয়ে যাওয়ায় চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শতাধিক পরিবার। কয়েক বছর ধরে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্টদের কাছে একাধিকবার ধর্না দিয়েও এর সুরাহা পাননি।

জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে এই উপজেলাসহ পাশের উপজেলা আলীকদমে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়ে ধাপে ধাপে এখনো চলমান রয়েছে ৩৩ হাজার লাইন স্থাপনের কাজ। লামা বিদ্যুৎ সঞ্চালক কেন্দ্র থেকে আলীকদম ও ইয়াংছামুখি লাইনগুলো একই সারিতে এনে দুর্ঘটনার কবল থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা যায়, ৮০’র দশকে স্থাপিত লামা বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র থেকে আলীকদম ও ইয়াংছামুখি তিনটি পৃথক হাই ভোল্টেজ লাইন দেওয়া হয়েছে। এসব লাইনগুলো স্থানীয়দের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছুঁয়ে যাওয়ায় বর্তমানে চরম ঝুঁকি বিরাজ করছে। এর ফলে বাড়ির আঙ্গিণায় সৃজিত গাছগাছালীর সংস্পর্শে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে চলছে। সম্প্রতি হাসপাতালপাড়ার এক প্রকৌশলী যুবক বাসার ছাঁদে উঠে গাছের নারিকেল পাড়তে গিয়ে জীবন হারাতে হয়েছে বিদ্যুৎস্পর্শে।

লামা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড মধুঝিরি বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রের কয়েক মিটার দক্ষিণে ফরেষ্ট অফিস জামে মসজিদের ছাঁদ ঘেসে ১০ গজ পশ্চিম দিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে রয়েছে দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি। অথচ ফরেষ্ট মসজিদের আঙ্গিণা ঘেষে পূর্বপাশে প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের মুল লাইনটি আলীকদমমুখি সম্প্রসারিত হয়েছে। লামা ডিভিশনাল ফরেষ্ট অফিসের পশ্চিম পাশে মসজিদসহ আবাসিক ঘর-বাড়ির উপর দিয়ে ১১ হাজার কেভি হাই ভোল্টেজ তার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তিনটি দক্ষিণ দিকে বিপদজনকভাবে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে ৩৩ হাজার ভোল্টেজ’র খুঁটি স্থাপনের কাজ চলছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে যখন এসব বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার স্থাপন করা হয় তখন সেখানে তেমন কোন স্থাপনা কিংবা ঘর-বাড়ি ছিলনা। ফলে তৎকালীন সময়ে যত্রতত্র এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই এলাকায় সরবরাহকৃত বৈদ্যুতিক লাইনের তারের নিচের জমি/পাহাড়ের ঢালুতে অনেক ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপশি লামা উপজেলায় ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পৌরসভা। নগরায়নে উন্নীত হওয়ার আকাঙ্খা লালিত স্থানীয়রা পৌরসভা কর্তৃক গৃহ নির্মাণের নকশা পাশকরণের মাধ্যমে বেশ কিছু ঘরবাড়ি (ইমারত) বিল্ডিং নির্মাণের কাজ করছেন। কিন্তু ঘর বাড়ি এবং স্থাপনা সমূহের সরাসরি উপর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন ছুঁয়ে যাওয়ায় নির্মাণাধীন স্থাপনা সমূহের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে পূর্বের স্থাপনাগুলোও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পৌর এলাকায় জায়গা-জমির দাম খুব বেড়ে যাওয়ার কারনে ৩/৪ শতাংশ, কেউবা ৫ শতাংশ জায়গা কিনে ঘর বাড়ি বানাচ্ছে। কম জায়গায় অনেকেই বহুতল ভবন তৈরি করছেন। একদিকে কম জায়গা অন্যদিকে ঘর বা ছাদের উপর হাই ভোল্টের বৈদ্যুতিক তারের ঝামেলা। সূতরাং বহুতল ভবনের স্বপ্ন থাকলেও সামর্থবানরা বিদ্যুৎ লাইন বিড়ম্বনায় সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না।

নির্মাণাধীন পাকা স্থাপনা বা ছাদের উপর দিয়ে হাই ভোল্টেজের তার যাওয়াতে এলাকাবাসী এখন মহা বিপদের সম্মুখিন। সমুহ দূর্ঘটনা এড়াতে এসব লাইনগুলো একই সারিতে পূন:স্থাপন করা না হলে আরো আকস্মিক প্রাণঘাতি দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন আশংকা স্থানীয়দের।

ইতিপূর্বে এসব বিষয় নিয়ে বহু অভিযোগ-অনুযোগ হয়েছে, কিন্তু এর সমাধান মিলেনি। অবিলম্বে লামা ফরেষ্ট মসজিদের পশ্চিমের ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি ও হাই ভোল্টের লাইন স্থানান্তর করে একই সারিতে আনা প্রয়োজন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনার গণদাবি উঠেছে।

এ বিষয়ে কথা হলে লামা উপজেলা বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। তাছাড়া ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ লাইন স্থাপণের কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে। এতে কারো বাড়ির আঙ্গিনায় বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়লেও কিছু করার নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close