মো. হেলাল উদ্দিন উজ্জ্বল, ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ)
ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলায় মানুষের ঢল
পৌষ মাসের শেষ দিনকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় পুহুরা। জমিদার আমল থেকে প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিন লক্ষ্মীপুর বড়ইআটা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা অনুষ্ঠিত।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে লক্ষিপুর গ্রামে হুমগুটি খেলার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মমতাজ উদ্দিন। এ সময় জেলা পরিষদ সদস্য তাজুল ইসলাম বাবলু, কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষ লক্ষিপুর ও দশমাইলের মাঝামাঝি তেলিগ্রাম বড়ই আটা গ্রামে যেখানে জমিদার আমলে তালুক বনাম পরগনার জমির সীমানায় হাজারো খেলোয়াড়ের মাঝে হুমগুটি (৪০ কেজি ওজনের একটি পিতলের তৈরি বল) ছেড়ে দেওয়া হয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যায় কনকনে শীত উপেক্ষা করে ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলায় লাখো মানুষের ঢল নামে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লক্ষিপুর গ্রামে খেলাটি চলছিল।
গতকাল ময়মনসিংহ সদর, ত্রিশাল, মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ভোর হতে নেতৃত্বস্থানীয়রা স্ব স্ব ইউনিয়নের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও মাইকিং করে নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত করে খেলোয়াড়দের। দুপুর থেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে হাজার হাজার খেলোয়াড়রা খেলার মাঠে আসতে শুরু হয়।
খেলা উপলক্ষে লক্ষীপুর, বড়ই আটা, ভাটিপাড়া, বালাশ্বর, শুভরিয়া, কালিবাজাইল, তেলিগ্রাম, সারুটিয়া, গড়বাজাইল, বাসনা, দেওখোলা কুকরাইল, বরুকা, আন্ধারিয়াপাড়া, জোরবাড়িয়া, ফুলবাড়ীয়া, কাতলাসেনসহ আশপাশের ৮/১০ টি গ্রামে ব্যাপক আনন্দ উৎসব দেখা যায়। খেলার কেন্দ্রস্থলের পাশেই বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা।
জানা গেছে, মুক্তাগাছা জমিদার রাজা শশীকান্তের সাথে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকে তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে ও পরগনার প্রতিকাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। একই জমিদারে ভূখন্ডে দুই নীতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে উঠে প্রজাদের মধ্যে। জমির পরিমাপ সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসাকল্পে লক্ষিপুর গ্রামের বড়ই আটা গ্রামে তালুক পরগনার সীমানায় প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য ‘হুমগুটি খেলা’র আয়োজন করেছিলেন জমিদাররা। হুমগুটি খেলার শর্ত ছিল, নির্দিষ্ট ওজনের পিতলের গুটি’টি যে দিকে যাবে তা হবে পরগনা ও পরাজিত অংশের নাম হবে তালুক। জমিদার আমলের গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হয়। সেই থেকে এ অঞ্চলের জমির পরিমাপ সাড়ে ৬ শতাংশে এক কাঠা।
মোহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষাক মোন্নাফ হোসেন জানান, হুমগুটি খেলা ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্য। জমিদার আমল থেকে তেলিগ্রাম বড়ই আটা গ্রামে খেলাটি চলে আসছে।
হুমগুটি খেলা স্মৃতিসংসদের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, জমিদার আমলের তালুক ও পরগণা প্রজাদের দলগত শক্তি পরীক্ষার জন্যই তালুক ও পরগণার সীমানায় হুমগুটি খেলার আয়োজন করেছিল। আমাদের পূর্ব পুরুষরা যুগ যুগ হুমগুটি খেলাটি ধরে রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষ দিন বড়ইআটা গ্রামে হুমগুটি খেলার আয়োজন করি। হুমগুটি খেলা বেশির বাগ ১/২ দিন হয়। পূর্বে টানা ৫ দিন খেলা চলার রেকর্ডও রয়েছে।
"