হাসান ইমন
মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজধানীর মিনি ডাস্টবিন প্রকল্প
পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ঢাকার রাস্তার পাশে মিনি ডাস্টবিন বসিয়েছেন দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। রাজধানীর ফুটপাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে দুই সিটির ৯৩টি ওয়ার্ডে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি মিনি ডাস্টবিন বসানো হয়। কিন্তু বিনগুলো যথাযথ ব্যবহার না হওয়া, পরিচ্ছন্নকর্মীদের অবহেলা, বেশির ভাগ বিন ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া এবং কিছু চুরি হয়ে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দুই সিটির মিনি ডাস্টবিন প্রকল্প। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এই বিষয়টিকে নাগরিক সচেতনতার অভাবকে দায়ী করলেও নগর পরিকল্পনাবিদরা দুই সিটির অবহেলাকেই দায়ী করেছেন।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ডাস্টবিনই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বেশ কিছু ডাস্টবিনের ঢাকনা চুরি হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ডাস্টবিনের বক্সটি ভাঙাচুরা অবস্থায় রয়েছে। কোথাও আবার লোহার খাঁচাটি দাঁড়িয়ে আছে। আবার অনেক স্থানে গোটা ডাস্টবিনই লাপাত্তা। আবার কোথাও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা জমে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আবার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মিনি ডাস্টবিনগুলো রাস্তার পাশে বসানোর কারণে রিকশা, লেগুনা বা বাসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ফলে বসানো অধিকাংশ বিনই নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও নগরীর অধিকাংশ এলাকায় ডাস্টবিনগুলো দোকানিরা বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখায় পথচারীরা যেখানে-সেখানে আবর্জনাগুলো ফেলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কামডোর শফিকুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে মিনি ডাস্টবিন বসানো হয়। কিন্তু নগরবাসীর সচেতনতা না থাকায় এই ছোট ডাস্টবিনগুলো কাজে আসেনি। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবহেলাও দায়ী। নগর পরিকল্পনাবিধ ইকবাল হাবিব বলেন, এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনেরই অবহেলা। জনগণকে সচেতন না করেই এই ডাস্টবিনগুলো বসানো হয়।
কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আসলাম মিয়া জানান, তার দোকানের পাশের ডাস্টবিনটি চুরি হয়ে গেছে। শুকনো ময়লা বিশেষ করে চিপসের প্যাকেট, বাদামের খোসা, যেকোনো শুকনো খাবারের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেট ফেলানোর জন্য মিনি ডাস্টবিন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৭০০টি ডাস্টবিন স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ৫৬০টি ছোট ডাস্টবিন আর বাকিগুলো অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতিটি ছোট ডাস্টবিন তৈরিতে খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকা। আর বড়গুলোতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার টাকা করে। এই মিনি ডাস্টবিন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা জানতে মাঠে জরিপ করা হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় ২২০টি ওয়েস্ট বিন চুরি হয়েছে, ৯৮টি গাড়ির ধাক্কা ও দোকানিদের অসুবিধার কারণসহ নানাভাবে নষ্ট হয়েছে। ৫৮৬টি আংশিক নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯০০টির মতো বিন ব্যবহার হচ্ছে না। আর বাকি বিন ঠিক আছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায়ও একই সময়ে স্থাপন করা হয়েছে এক হাজার ডাস্টবিন। পরে আরো পাঁচ হাজার ডাস্টবিন বসানোর কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। যেটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তাও বছর পেরোতেই উধাও হবে, সে কথা ভাবেননি সংশ্লিষ্টরা। বছরের শুরুতে মাঠ জরিপে দেখা গেছে, ভাঙা ও উপড়ে ফেলা হয়েছে ১৭১টি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘ডিএনসিসির অনেক বিন চুরি হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে কিছু। সে বিষয়টি আমাদের জানা রয়েছে। যে এলাকায় চুরি বা নষ্ট হয়েছে, সেখানে নতুন ডিজাইনের বিন বসানো হবে। চুরি ঠেকাতে প্রতিটি বিন দুই পায়ের স্থলে চারটি করার চিন্তাভাবনা করছি। শিগগিরই এগুলো ডাস্টবিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসানো হবে।’
"