রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ০৪ মে, ২০২৪

ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বক্তব্য ভাইরাল

আমার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করবে, তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে : কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতা

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার খোকসায় ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় উত্তপ্ত বক্তব্য দিচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। এর মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বড় ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করবে, তারা আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে।’

গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে খোকসার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের গোসাইডাঙ্গী গ্রামে এক নির্বাচনী সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন এসব কথা বলেন। পরে এই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরায় হয়ে যায়। সদর উদ্দিন সেখানে বড় ভাই ও খোকসা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রহিম খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার সভায় অংশ নিয়েছিলেন। তার বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীসহ ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নির্বাচনী প্রচারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন বলেন, ‘আল্লাহপাক আমাকে দিয়ে উন্নয়ন করাবে। আমার সঙ্গে যারা বিরোধিতা করবে, আল্লাহর সঙ্গে বিরোধিতা করবে সে। কারণ আমি (নির্মাণ) করি আল্লাহর মসজিদ ঘর। ওই শয়তারাও (বিরোধিতাকারিরা) তো মসজিদে আসবে, শয়তানরাও গোরস্তানে শোবে। ওই মসজিদে যাইয়ে সে সুখী থাকতি পারবে না। হয় কোনো ওক্তে (ওয়াক্তে) যাবে, কোনো ওক্তে যাবে না। আর গোরস্তানে গেলি পারে (যাওয়া পর), গোরস্তানের মাটি অন্যান্য ইমানদাররা (যেভাবে আছে) সেভাবেই থাকবে। কিন্তু শয়তানদের যে মাটি চাপা হবে, সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না। যারা আমার সাথে বিরোধিতা করবে- মাওলানা বেলায়েত হোসেন সাহেব টের পাইত, ফুরফারা হুজুররা টের পাইত, গোরস্তানের পাশদিয়ে গেলিপারে শব্দ পাইত। কোন কবরে কোন শয়তানের কী সাজা হচ্ছে তারা টের পাইত, আমরা আপনারা পায়নি। কিন্তু তারা পাইত। এই হচ্ছে শয়তানদের পরিণতি হয়। আমি শয়তানদের অনুসারীদের বলব, তারা ওই শয়তানের সঙ্গে থাইকি এই শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই। ইহকালের শাস্তি, পরকালের শাস্তি। যারা শয়তান তারা কয়েকজন আছেন থাক, তা বাদে সবাই আপনারা একসঙ্গে আসবেন। এক সঙ্গে হয়ে জয় সুনিশ্চিত করেন। জয় আল্লাপাকের ইচ্ছা। আল্লাহপাকের রহমতে আজকে বলে গেলাম, জয় সুনিশ্চিত।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আখতার (মোটর সাইকেল), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিনের বড় ভাই দলের খোকসা উপজেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম উদ্দিন খান (দোয়াত কলম) ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ (ঘোড়া)। তবে নামমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে রহিম উদ্দিন খানের ছেলেকে। ভোটে মাঠে তিনি বাবার পক্ষে মাঠে ভোট চাইছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সদর উদ্দিন খান তার ভাইকে জিতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার পক্ষে তিনি নির্বাচনী সভা সমাবেশ করছেন। এর আগে তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। সে সময় দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা।

খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা থাকলেও থাকতে পারে। তবে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা বর্তমান সরকারপ্রধান প্রত্যাশা করছে।’

বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল শুক্রবার রাতে ও শনিবার বিকেলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের সঙ্গে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

খোকসা উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ ও ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার রয়েছে।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুষ্টিয়া,প্রার্থী,আওয়ামী লীগ,নেতা,সদর উদ্দিন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close