নিজস্ব প্রতিবেদক
জুরাইনের রাস্তায় ১২ মাস পানি
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে রাজধানীর জুরাইন ও দনিয়ার ১০ কিলোমিটার রাস্তা। সারা বছর জমে থাকে কারখানা ও গৃহস্থালির পানি আর বর্ষা এলে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। নোংরা ও পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন ৫৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে ভোগান্তি কমছে না।
গতকাল শনিবার দুপুরে কমিশনার সড়কে দেখা গেল, সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি। সেই পানির মধ্যে চলছে রিকশা, অটোরিকশা। বছরের পর বছর পানি থাকায় সড়কের দুই পাশের দোকানপাটের নিচের অংশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। রিকশাচালক মিরাজ বলেন, আর কত বছর পানির মধ্যে থাকতে হবে আমাদের? চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রিয়াজ উদ্দিন বলছিল, পানি ভেঙে আর স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। এক-দুই দিন হলে হয়, সারা বছর এভাবে চলতে হয়। পায়ে ঘা হয়ে যায়। এলাকাবাসী বলছেন, বর্ষাকালে রাস্তায় এত পানি জমে যে বাজারেও পানি ঢুকে পড়ে। দোকানপাট তলিয়ে যায়। তাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর সড়কটি জলাবদ্ধ থাকলেও এর সমাধানে কেউ কাজ করেননি।
জুরাইন আশরাফ মাস্টার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন মা-বাবার কোলে চড়ে স্কুলে যায়। সেটা সম্ভব না হলে ভাঙতে হয় হাঁটুপানি। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার চার লাখ মানুষ। ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছে, ছড়াচ্ছে রোগবালাই।
জুরাইন কমিশনার রোড, মিষ্টির দোকান, চেয়ারম্যান বাড়ি, ২৪ ফিট ও দক্ষিণ-পূর্ব দনিয়ার আটটি রোডের ওপর জমে আছে পানি। বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছেড়েছে অন্তত ১৫ হাজার ব্যবসায়ী।
এদিকে ওয়ার্ড কমিশনারের অভিযোগ-এ দায় ওয়াসা আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আর ওয়াসা দোষ চাপাচ্ছে সিটি করপোরেশনের ওপর। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং অবৈধ কারখানার পানি রাস্তায় ফেলাকেও কারণ বলছে ওয়াসা। সড়কের দুই পাশের অন্তত ১০০ মানুষের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রায় প্রত্যেক মানুষের মুখে একটাই কথা ছিল, আর কত বছর পানিতে থাকতে হবে? কেউ কি দেখার নেই? এভাবে কী মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? একটা রাজধানীর সড়ক যদি ১২ মাস পানির নিচে থাকে, এই লজ্জা কার? এভাবে আর বাস করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মাদ বিলাল বলেন, জুরাইনের কমিশনার সড়ক ১২ মাস পানির নিচে থাকে, এটা আমি জানি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
"