ক্রীড়া ডেস্ক
আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল
আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ সতর্ক ভারত
কয়েক বছর ধরেই বিশ্ব ক্রিকেটের রোমাঞ্চের দ্বৈরথের নাম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ-ভারত। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মঞ্চেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল টাইগারদের। লক্ষ্য ইতিহাস গড়া, স্বপ্নের শিরোপা লড়াইয়ে নাম লেখানো। পরোক্ষভাবে মধুর প্রতিশোধ নেওয়ারও উপলক্ষ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আজকের সেমিফাইনালের মহারণটা। এই লড়াইয়ের আসল টনিকটা মাশরাফিরা পাচ্ছেন গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মহাকাব্যিক জয়টা। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় এজবাস্টনে আরেকটা রূপকথার জন্ম দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে ছয় নম্বর দলটা।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের বিতর্কিত ম্যাচ, টি-টোয়েন্টির বিশ্বমঞ্চে স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ, মুস্তাফিজুর রহমানকে ধোনির ধাক্কা এবং আইসিসিতে ভারতের প্রভাব দেখানোর অপচেষ্টা। এ সবকিছু মিলিয়ে বাইশ গজে বাংলাদেশের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম হয়ে উঠেছে ভারত। বিশ্বকাপে বাজে আম্পারিংয়ের শিকার এবং মেলবোর্নের সেই হারের ক্ষতে প্রলেপটা টাইগাররা দিয়েছে ভারতকে ডেকে এনে সিরিজ হারিয়ে। এটাকে অবশ্য ঠিক প্রতিশোধ বলা যাবে না। মাশরাফিদের প্রতিশোধের মোক্ষম সুুযোগটা এসেছে আজ, এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে।
সুযোগটা কাজে লাগাতে বাংলাদেশ প্রেরণা পেতে পারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মহাকাব্যিক জয় থেকে। অস্ত্র হিসেবে ভারতের বিপক্ষে ব্যবহার করতে পারতে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজকে। বাঁহাতি এই পেসের সামনেই তো মিরপুরের মঞ্চে ছত্রখান হয়ে গিয়েছিল বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ফিজ তার স্বাভাবিক পারফরম্যান্সটাই করতে পারছেন না। চেনা প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে আজ না বিধ্বংসীরূপে হাজির হন মুস্তাফিজ! কে জানে হয়তো ভারতিদের জন্য হয় তো টুর্নামেন্টে নিজের সেরাটা তুলে রেখেছেন এ তরুণ।
গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারতও। অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনালে বিরাট কোহলির দল যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে এর বিশেষণ এক কথায় হতে পারে দুর্দান্ত। পারফরম্যান্সটা টাইগারদের বিপক্ষেও বয়ে আনার স্বপ্ন দেখছেন ভারতীরা। তবে বাংলাদেশি সমর্থকদের ভয়টা অন্য জায়গায়। ‘চৌদ্দজন’ নিয়ে নিয়ে না আবার মাঠে নামে ভারত। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১২৮ রানের ঝলমলে ইনিংস। পরের ম্যাচে পাঁচ রানের জন্য শতক বঞ্চিত। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি তামিম ইকবাল। হয়তো ভারতের জন্যই নিজের ব্যাটকে একটু বিশ্রামে রেখেছিলেন বাঁ-হাতি ড্যাশিং ওপেনার। ভারত যে তার প্রিয় প্রতিপক্ষ। ২০০৭ সালে ডাউন দ্য উইকেটে জহির খানকে যেদিন উড়িয়ে মেরেছিলেন তামিম, সেদিন থেকেই ভারতের আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন তিনি। ব্যাটিংয়ে আজ ভারতের সবচেয়ে বেশি ভয় এই তামিমকে ঘিরেই। প্রতিপক্ষের ভয়টা যেখানে, সেখানেই আশার ফুল ফোটাচ্ছে টাইগার ভক্তকুলরা। তা ছাড়া ভারতকে পেলে এমনিতেই তলোয়ার হয়ে ওঠে তামিমের ব্যাট।
ব্যাট অবশ্য চওড়া হয়ে আছে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও। বাংলাদেশ যে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে তার মূল অবদানটা এ দুজনেরই। তাদের দারুণ শতকেই কার্ডিফে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। ভারত ম্যাচেও মিডল অর্ডারে ভরসা হয়ে থাকবেন এ মানিকজোড়। সবশেষ পাঁচটি ম্যাচে দুই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান একই সুতোয় গাঁথা। বাংলাদেশ যেখানে তিনটি ম্যাচ জিতেছে। সেখানে দুটিতে হেরেছে ভারত। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে সমতায় থাকলেও অন্যদিক থেকে দুদলের পার্থকট্য যোজন-যোজন। ওয়ানডেতে ৩৩ বারের দেখায় ভারতকে পাঁচবারই হারাতে পেরেছে টাইগাররা। যার প্রথম জয়টি ২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচে চার পেসার খেলিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আজকের একাদশে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে ম্যানেজমেন্ট। সে ক্ষেত্রে কায়েস ও মিরাজকে একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়তে হবে।
"