ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

বিপিএল বয়কটের হুমকি কুমিল্লার

দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর। এর ঠিক দুদিন আগে টুর্নামেন্টের আয়োজক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) হুমকি দিয়ে বসল চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য টেকসই আর্থিক কাঠামো ও পেশাদার কোনো মডেল না থাকলে পরেরবার আর বিপিএলে অংশ নেবে না কুমিল্লা। বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে কর্ণধার নাফিসা কামাল তুলে ধরেন বিপিএলের কয়েকটি দিক, যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : সাকিব-মাস্কো একাডেমিতে অনুশীলন করছে কুমিল্লা। কারণ কী?

নাফিসা কামাল : সাকিব-মাসকো একাডেমিতে অনুশীলন করতে হচ্ছে, কারণ এটা আমাদের ক্রিকেটারদের জন্য সুবিধা, দূরত্ব ও যোগাযোগের দিক থেকে। আমাদের কোচও সেখানেই বেজড। কুমিল্লায় যেতে হলে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে যোগাযোগ এখনো উন্নত হয়নি। যে কারণে সেখানে আমরা এখনো বিপিএলের ম্যাচও করতে পারছি না। তবে আমাদের স্টেডিয়ামের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে এবং আমরা আশা করি যে, আগামী বিপিএলে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ম্যাচ হবে। সেটার দায়িত্ব পুরোপরি আমাদের এবং আমরা নিয়ে কাজ করছি এটা নিয়ে। জায়গা, এলাকা, স্টেডিয়ামের অবকাঠামো, স্থাপত্য পরিকল্পনা সব কিছু পাস হয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ এখনো উন্নত নয়।

একদম নতুন স্টেডিয়াম হবে এটি, ৩০ হাজার ধারণ ক্ষমতার। সদর দক্ষিণে এ স্টেডিয়ামটা হবে। এটা পাস করে গেছেন রাসেল ভাই (জাহিদ আহসান রাসেল), আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন। এখন পাপন ভাইকে (নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী) নতুন করে অ্যাপ্রোচ করব। যাতায়াত একটা সমস্যা, যেহেতু এয়ারপোর্ট নেই। তবে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয়ে গেলে বাকিগুলোও হয়ে যাবে। এটা আমাদের দায়িত্ব, আমাদের পরিবারের দায়িত্ব। আমরা এটার ব্যবস্থা করব।

প্রশ্ন : আপনারা অনেক বছর আছেন বিপিএলে। চারবার চ্যাম্পিয়ন হলেন, একবারও কি আর্থিক লাভ হয়েছে?

নাফিসা কামাল : আমি তো বললাম, খুব ভালো হয় যদি আমাদের আয়-ব্যয় সমান হয়ে যায় টুর্নামেন্টের শেষ দিনে। মিথ্যা বলব না, লাভ কখনোই হয়নি।

প্রশ্ন : রাজস্ব আয় নিয়ে অনেকবার বলেছেন। এসব নিয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনা কবে হয়েছে আপনাদের?

নাফিসা কামাল : ভুলেই গিয়েছি আর কখনো কথা হবেই না মনে হয়। এ বছর একবার বলেছিলাম, ‘আপনারা আমাদের সঙ্গে একটা মিটিং করেন শুধু, একবার সামনাসামনি বসি।’ কিন্তু কোনো মিটিং করা হয়নি। বিপিএল যেদিন শুরু, সেদিন থেকে আইএল টি-টোয়েন্টি শুরু (সংযুক্ত আরব আমিরাতের)। মইন, সুনিল, রাসেল-ওরা জিজ্ঞেস করেছিল বিপিএল কনফার্ম হবে কি না। আমি তখনো একদমই নিশ্চিত নই যে বিপিএল হবে। তখন আমি বলেছিলাম (বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে) যে, ‘আমাদের সঙ্গে একবার বসুন দয়া করে, একটু আইডিয়া নিন, কবে হলে, কী হলে ভালো হয়। আমরা ডমিনেট করব না, আপনাদের মতোই আপনারা করবেন। শুধু একটু আমাদের আইডিয়াগুলো শুনুন।’ কিন্তু মিটিং হলোই না, খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কী কারণে হলো না- তারা কি কোনোভাবে থ্রেট মনে করে আমাদের? আমরা তো বিপিএলের অনেক বড় স্টেক হোল্ডার্স, কীভাবে না বসতে পারে! পিএসএলের দিকে তাকান, সবগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি একমত না হওয়া পর্যন্ত তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি। এ সামান্যতম সম্মানটুকু না পেলে কীভাবে হয়! ২০১৫ থেকে আমি কুমিল্লা নিয়ে বিপিএলে আছি, আমার এ দীর্ঘ সময়ে বিসিবি কোনো মিটিং করেনি আমাদের সঙ্গে। একবার হয়েছিল অনেক আগে, যেটা খুবই নরমাল, উল্লেখ করার মতো কিছু নয়।

প্রশ্ন : আপনি নাকি সভা হলে খুব রেগে যান, মতে না মিললে সভা ছেড়ে উঠে চলে যান?

নাফিসা কামাল : না না, এটা খুবই ভুল কথা। এটা কেউ বললে পুরোপুরি মিথ্যা বলেছে। আমি যে পরিবার থেকে এসেছি, আমার বাবা বিসিবি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আবাহনীতে ছিলেন। যে মানুষগুলোর কথা আমি বলেছি, সবাই আমার খুবই চেনা, একদম ছোটবেলা থেকে। আমি বড় হয়েছি তাদের দেখে, বিসিবিতে যারা এখন আছে। আমি তাদের সঙ্গে কখনো বেয়াদবি করব, এটা হতেই পারে না। আমার পরিবার সেটা অ্যালাও করবে না। আমরা কিছু যৌক্তিক পয়েন্টস দিতে চাই, যেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে। উন্নতির জন্য দরকার হবে। বিপিএলের জন্য ভালো হবে। তারা এটা মানতে রাজি নয়। এখন আমি যদি তাদের জন্য যদি বেশি হয়ে যাই, দে আর নট রেডি টু টেক মি। তবে আমি বেয়াদবি করব, রেগে উঠে যাব, যারা আমার আঙ্কেল, চাচা, মামা এটা তো অসম্ভব।

প্রশ্ন : ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এত টাকা খরচ করে কতটা পাচ্ছে?

নাফিসা কামাল : আমি আগামী বছর বিপিএল করব কী না, নিশ্চিত নই। আমার মনে হয় না এখন যেভাবে হচ্ছে, আমার পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমি এটাই অনুরোধ করেছিলাম যে, একটা মিটিং করতে চাই বিসিবির সঙ্গে। মিটিং হলে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বসবে, সবাইকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। সবাই বিনিয়োগ করছে। কেউ শখে আসে না।

প্রশ্ন : তাহলে বিপিএলের ভবিষ্যৎ কী?

নাফিসা কামাল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স না থাকলে বিপিএলের ভবিষ্যৎ আর কী হবে! বিপিএল হয়তো হবে, তবে অন্য ধরনের বিপিএল হবে। এবারের বিপিএলই একটু অন্যধরনের হবে। আপনারা বুঝতে পারলে বুঝবেন, না পারলে নাই। আশা করি বুঝতে পারবেন। এখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স একা একদিকে, বাকি সব একদিকে।

প্রশ্ন : বারবার বলছেন, সামনের বার নাও থাকতে পারেন। ব্যাপারটা কি এরকম যে, আগামীবার থেকে রাজস্বের ভাগ না পেলে আপনারা থাকবেন না?

নাফিসা কামাল : হ্যাঁ, শতভাগ, থাকব না। টিকিট রাইটস, গ্রাউন্ডস রাইটস, মিডিয়া রাইটস এ তিনটারই ভাগ চাই।

প্রশ্ন : রাজস্বের কত ভাগ চায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা?

নাফিসা কামাল :আমরা খুবই ফ্লেক্সিবল হব। তাদের যেটা ভালো হয়, সেটাই নিতে রাজি আছি। যদি আমাদের একদম সবচেয়ে কমও দেয়, তবু রাজি। তবু শুরু করুক, আর্থিক মডেলটা তৈরি করুক, কাঠামো তৈরি করুক। প্রশ্ন : বিপিএলে কত আয়-ব্যয় হচ্ছে বা এরকম যা কিছু তথ্য, আপনাদের জানানো হয়?

নাফিসা কামাল : কখনোই না। পিএসএলে কিন্তু শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, মিডিয়াকেও সব জানানো হয়। বিপিএল থেকে আমরা কখনো জানতে পাই না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close