ক্রীড়া ডেস্ক
আরো দূরে চোখ বাংলাদেশের
শুরুটা হয়েছিল লিটন দাশের বিস্ফোরণ এবং তামিম ইকবালের ঝড় দিয়ে। ৩৫ বলে ৭২ রানের টর্নেডো ইনিংস দিয়ে সুন্দর সমাপ্তি টেনেছেন মুশফিকুর রহিম। ভাঙা পা নিয়ে দেখিয়েছেন দুর্দান্ত ব্যাটিং দৃঢ়তা। মুশফিক বীরত্বের সুবাদে শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২১৪ রানের পাহাড় জয় করেছে বাংলাদেশ। রাজসিক এই জয়ের পরও উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে না টাইগাররা। চোখ আরো অনেক দূরে।
কিন্তু বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন দুই ওপেনার তামিম এবং লিটন। ব্যাট চালিয়েছেন দুজনই। কিন্তু লিটনের ব্যাট হয়ে উঠেছিল তরবারী। যা দিয়ে কচুকাটা করেছেন লঙ্কান বোলারদের। ২১৪ রানের চাপের বিপরীতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছে লিটনের ১৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংসটা। যা জয়ের দ্বার খুলে যায় বাংলাদেশের। অথচ আগের ম্যাচে তিনে খেলেছিলেন লিটন। পরশু তাকে শুরুতে নামানোর পরিকল্পনাটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে। ম্যাচ শেষে তামিম বলেছেন, ‘আমরা জানতাম অফ স্পিনের মুখোমুখি হয়ে শুরু করতে হবে। এ কারণেই আমরা লিটনকে ওপরে তুলে এনেছি। পরিকল্পনাটা তাদের নয়, আমাদের কাজে লেগেছে।’
এই জয়ে অবদান আছে তামিম এবং অনদেরও। তবে নিজের কথা না বললেও সতীর্থদের কথা বললেন তিনি সংবাদ সম্মেলনে, ‘সবাই ভেবেছিল, প্রথম ৬ ওভারে ভালো শুরু পেলে এবং মাঝে ভালো ব্যাটিং করলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। লিটন ও আমার প্রথম ছয় ওভারে ব্যাটিং দারুণ ছিল। এরপর মুশি, সৌম্য, রিয়াদ মাঝে দারুণ করেছে।’
টি-টোয়েন্টিতে মুশফিক স্ট্রাইক রোটেড করতে পারেন না বলে অভিযোগ ছিল নিন্দুকদের। পরশুর ইনিংসটা দিয়ে সমলোচকদের দাঁতভাঙা একটা জবাব দিলেন মুশফিক। টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের পর কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকলেন তিনি। পায়ের ইনজুরি নিয়েও মুশফিক যেভাবে লঙ্কান বোলারদের বেধরক পিটিয়েছেন সেটার বিশেষ হতে পারে অনেক কিছুই। তার এমন ব্যাটিং দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসন পাপনও। তিনি বলেছেন, ‘তামিম-সৌম্য যে এভাবে মারতে পারে, এটা আমাদের জানা ছিল। লিটন যে মারতে পারে, জানা ছিল না। মুশফিক তো না-ই। সত্যি বলতে, মুশফিককে সবার সামনে কালকেও (শনিবার) বলেছি, ‘তুমি যে এরকম মারতে পারো, আমি জানিই না!’
টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ চতুর্থ রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহিমের উদ্যাপনটাও হয়েছে মনে রাখার মতো। এক ভারতীয় সাংবাদিক মুশফিককে অভিনন্দন জানালেন, ‘আপনার উদ্?যাপনটা দারুণ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটার পেছনের গল্পটা কি বলবেন?’
কিন্তু এমন একটা জয়ের পরও উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে না বাংলাদেশ। দলের পা মাটিতেই। তবে এই জয়টার উপর দাঁড়িয়ে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে এগিয়ে যেতে চান সংবাদ সম্মেলনে আসা তামিম। বলেছেন, ‘আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি। সবকিছু জয় করে ফেলিনি। তবে এটা আমাদের সামনে পথ চলতে সহায়তা করবে। আশা করছি গত কয়েক মাসের দুঃস্মৃতি ভুলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
গত কয়েক বছর দুর্দান্ত ক্রিকেট খেললেও গেল দু মাস সময়টা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। অবশেষে বীরদর্পে প্রত্যাবর্তন করল টাইগাররা। পরশুর কলম্বোর এই জয়টা দলের আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। তামিমের কাছে এই জয়টা স্পেশাল। তিনি বলেছেন, ‘আমরা গত কয়েকটা বছর ভালো ক্রিকেট খেলেছিলাম। কিন্তু দল হিসেবে শেষ কয়েকটা ম্যাচে ভালো করতে পারিনি। দুইশোর্ধ্ব রান তাড়া করে জিতেছি। এই জয়টা আমাদের কাছে অনেক কিছু। এর আগে আমরা কখনো এমন কিছু করতে পারিনি। আপনি যখন দুশো রান তাড়া করে জিতবেন তখন সেটা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। এটা স্পেশাল একটা জয়।’ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এগিয়ে যেতে এই জয়টাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন তামিম। বলেছেন, ‘এই ফরমেটে আমাদের এখনো অনেক কিছু প্রমাণের বাকি আছে। এটা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
"