আরিফুর রহমান সেলিম

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

ব্যাঙের ছানার বিশ্বভ্রমণ

আমি হলাম ব্যাঙের ছানা

আমার তো নয় দুচোখ কানা

দেখব আমি বিশ্বটাকে

হবি আমার শিষ্যটা কে?

ব্যাঙের ছানার কথা শোনে পুঁটি মাছের ছোট্ট ছেলে ধিতাং আর কচুরিপানার ছোট্ট মেয়ে তিতাং লাফিয়ে উঠল। বলল, আমরা হব তোমার শিষ্য। যাবে নাকি তোমার সঙ্গে আমাদের নিয়ে। তারপর ট্যাংরা মাছের পুঁচকে মেয়ে কিতাংও বলল, তোমাদের সঙ্গে আমাকেও নাও। আমিও যাব। নিতেই হবে আমাকে। না নিলে আমি কিন্তু কেঁদেই ফেলব। এই বলেই সে ভ্যা ভ্যা কান্না জুড়েই দিল। ব্যাঙের ছানা টিটাং তখন বলল, থাম থাম কাঁদিস না। আমি তোদের সবাইকে নিয়েই বিশ্বভ্রমণে বের হব। এই কথা শোনে তো সবাই হই হই করে উঠল।

টিটাং, কিতাং, তিতাং, ধিতাং- সবাই বসবাস করে একটা পুকুরে। এখানেই মিলেমিশে সবার বসবাস। কি নেই এখানে? বড় বড় স্কুল, সুপার মল, পর্যটনকেন্দ্র, পাহাড়, হাসপাতাল সব আছে এখানে। টিটাংয়ের স্বপ্ন সে বিশ্বটাকে ঘুরে বেড়াবে। তাই তো তাদের নবযাত্রা।

ব্যাঙের ছানা টিটাং তার বন্ধুদের নিয়ে বের হলো বিশ্বভ্রমণে। কচুরিপানার মেয়ে তিতাংয়ের তো আনন্দের শেষ নেই। সে একটা লাল জামা পরেছে, মাথায় দিয়েছে টিপ আর ঠোঁটে লিপস্টিক। ট্যাংরার মেয়ে কিতাং মাথায় ঝুটি বেঁধেছে। পুঁটির ছেলে তো আরো নায়ক নায়ক ভাব। গলায় সোনার চেইন আর মাথায় টুপি দিয়ে সে যেন মহানায়ক হয়ে গেছে। ব্যাঙের ছানা টিটাং তো তাদের দেখে খুশিতে আটখানা। তার ভ্রমণসঙ্গীরা খুব আধুনিক।

প্রথমেই টিটাংদের সামনে পড়ল একটা স্কুল। টিটাং বলল, চলো আগে স্কুলে যাই। তাই বন্ধুদের নিয়ে প্রথমেই স্কুলে গেল। সেখানে বোয়াল স্যার গানের ক্লাস নিচ্ছেন। বোয়াল টিটাংকে বলল, গতকাল স্কুলে আসোনি কেন বাবা? টিটাং কি আর বলতে পারে সে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছে। সে বলল, আমার গতকাল সর্দি ছিল। বোয়াল তো চমকে উঠল। কি! ব্যাঙের ছানার সর্দি! এটা কি সম্ভব! ধিতাং, তিতাং, কিতাং বলল, হ্যাঁ স্যার সম্ভব। বোয়াল স্যার হাসতে লাগলেন। হাসতে হাসতে বললেন, বুঝেছি। এবার টিটাং গানের ক্লাসে একটা গান গাও। কি আর করা। ব্যাঙের ছানা টিটাং গান ধরল...

ধুম তানা না না না না তারা রা রা ধুম

আমার দুচোখ জুড়ে কেবল থাকে যেন ঘুম

সকাল হলেই আম্মু আমার মুখে খায় চুম

আদর পেয়ে রোজ সকালে ভাঙে আমার ঘুম।

ব্যাঙের ছানার গান শুনে সবাই হাত তালি দিল। বোয়ালও খুব খুশি হলো এ গান শুনে আর দোয়া করল ব্যাঙের ছানা অনেক বড় হবে। আর বলল, সে যেন তার মায়ের কথা শুনে এবং মাকে সম্মান করে। স্যারের প্রশংসা শুনে ব্যাঙের ছানার চোখে কান্না চলে এলো।

হই-হুল্লোড় করে ব্যাঙের ছানা ও তার সঙ্গীরা তারপর গেল সুপার মার্কেটে। ওমাগো মা। সেখানে কী নেই। ফ্রিজ, টিভি, জুতা, চুলের ক্লিপ, চিপস সব আছে সেখানে। এক দোকানে গিয়ে ট্যাংরার মেয়ে বলল, এই যে ভাই লিপস্টিক আছে? দোকানি বলল, আছে। কোনটা দেব? ট্যাংরার মেয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল, একটি গোলাপি কালারের লিপস্টিক দাও। পুঁটির ছেলে ধিতাং বলল, ওহ মেয়েরা যে কী করে। মাথার ক্লিপ, লিপস্টিক, চুড়ি সবই তাদের গোলাপি কালারের হওয়া চাই। এই রংটাকেই মেয়েরা নিজেদের করে নিয়েছে। ধিতাংয়ের কথা শুনে দোকানিসহ সবাই হি হি হি করে হাসতে লাগল।

তারপর গেল তারা পর্যটনকেন্দ্রে। সেখানে কি সুন্দর নাগরদোলা, মিনি চিড়িয়াখানা, সুইমিংপুলসহ আরো কত কি। কচুরিপানার মেয়ে তিতাং বলল, আমরা নাগরদোলায় চড়ব। সবাই মিলে নাগরদোলায় উঠে হই-হুল্লোড় করতে লাগল। যখন নাগরদোলার গতি গেল বেড়ে, সবাই ভয়ে ওমাগো, ওবাবাগো বলে চিল্লাতে লাগল।

ট্যাংরার মেয়ে টিটাংয়ের খুব ইচ্ছে ফুচকা আর চটপটি খাবে। একটা দোকানে সবাই মিলে বসে ইচ্ছেমতো ফুচকা আর চটপটি খেল। তেঁতুলের টকপানি দিয়ে ফুচকা আর চটপটি খাওয়া কি যে মজা। কচুরিপানার মেয়ে তিতাং বলল, ইশ আমি যদি সারাজীবন শুধু চটপটি আর ফুচকা খেতে পারতাম। ব্যাঙের ছানা টিটাং বলল, তাহলে তোকে ফুচকাওয়ালা আর চটপটিওয়ালার কাছে বিয়ে দিয়ে দিই। সারা বছর ধরে তুই শুধু ফুচকা আর চটপটি খাবি। এই কথা শুনে সবার সে কি হাসি।

সেখান থেকে তারা গেল পাহাড় দেখতে। এত্ত উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের আবার ঝরনাও আছে। ঝরনার কাছে গিয়ে তারা কিছুক্ষণ নাচানাচি করল আর পানিতে হাবুডুবু খেলো। নাচতে নাচতে কচুরিপানার মেয়ে তিতাং ঝরনার পানিও খেয়ে ফেলল।

কচুরিপানার মেয়ে তিতাং হঠাৎ বলল, আমার পেটটা যেন কেমন করছে। এখন আমার কী হবে? সবার মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। সবাই বলল, ওগো জলদি হাসপাতালে নিতে হবে। ও বেশি ফুচকা আর চটপটি খেয়েছে। তাতেই হয়তো ওর পেটে গ-গোল দেখা দিয়েছে। সবাই তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে ছুটল। হাসপাতালে গিয়েই তিতাং পাতলা পায়খানা করল কয়েকবার। তারপর ডাক্তার দেখানো হলো। ডাক্তার কয়েকটা ওরস্যালাইন খেতে দিলেন তিতাংকে। ওরস্যালাইন খেয়ে তিতাং ভালো হয়ে গেল।

তিতাংকে নিয়ে সবাই নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরল। ব্যাঙের ছানা বলল, আমাদের দারুণ একটা বিশ্বভ্রমণ হলো। কত কিছু দেখলাম আর কত কিছু শিখলাম। ধিতাং, তিতাং টিটাংকে ধন্যবাদ জানাল। শেষে ধিতাং ছড়া কাটল...

বিশ্বভ্রমণে গিয়ে আমরা

হলাম ভীষণ খুশি

আবার যাব সুযোগ পেলেই

মনে আশা পুষি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close