আশরাফ আলী চারু

  ৩০ জুলাই, ২০২২

ভূতল ভূত

অনিকদের গ্রামের নাম হাতীবর। উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলার সৌন্দর্যে ভরপুর গ্রামটি। চারদিকের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক রূপ মুগ্ধ করে সবাইকে। মন ভরে যায় পাহাড়ি অরণ্য গুল্মলতায়। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঝোরাটি সত্যিই অপরূপ। এই মনোমুগ্ধকর গ্রামে বেড়ে উঠছে অনিক। সে হাতীবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। এ বয়সেই সে আশপাশের পাহাড় অরণ্য প্রকৃতি নিয়ে অনেক কিছুই ভাবে। বিকেলে সে ঘুরে বেড়ায় এ টিলা থেকে ও টিলায়। চোখ জুড়িয়ে যায় তার। আহা কী অপরূপ রূপ বাংলা মায়ের।

অনিকের প্রতিদিনের ঘোরাঘুরি দেখে এক দিন রাতে মা বললেন- এভাবে প্রতিদিন কোথায় ঘোরাঘুরি করিস?

- কেন মা, পাহাড়ের টিলায়।

- পাহাড়ে কত কিছু থাকে এভাবে ঘোরাঘুরি কি ঠিক?

- কী থাকে মা!

- হাতি থাকে, ভূতপ্রেত থাকে। ভূতল ভূতের অভাব আছে পাহাড়ে!

অনিক পাহাড়ে হাতি নামে এই বিষয়টি জানে। আজ মার মুখে এই প্রথম শুনল পাহাড়ে ভূতপ্রেতেরও অভাব নেই। আবার ভূতল ভূত! সে মায়ের মুখ থেকে এসব শুনে ভয় পেলেও তার আগ্রহ বেড়ে যায় ভূত নিয়ে। ভূত বিষয়ে ভাবতে ভাবতে সে সেদিন রাতে ঘুমাতে যায়।

ভোরবেলায় জাগে অনিক। তাদের বাড়ির পূর্বপাশের টিলায় চোখ পড়তেই অনিক চমকে ওঠে। মায়ের বলা সেই কথা মনে পড়ে। সত্যিই তো পাহাড়ে ভূত আছে! যদি তাই না হতো সে কী দেখল ওটা? কীসের আলো জ্বলছে ওখানে? বিষয়টি কাছে গিয়ে দেখার খুব আগ্রহ হলো তার। কিন্তু লোকজন এখনো ঘুম থেকে না জাগার কারণে একা গিয়ে দেখার সাহস হলো না। সে অপেক্ষা করল। কিন্তু দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যেতে দেখল আলোটাকে। যেহেতু আলোটা মিশে গেল, তাই সে এ বিষয়টি কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করল না। সে মনে মনে পরের দিনের অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল। স্কুলে গিয়েও ঘটনাটা ভুলতে পারল না অনিক। বারবার মনে হতে থাকল ওই ঘটনা।

সন্ধ্যা রাতে সে একবার তাকাল ওদিকে। কিন্তু কোনো কিছুই চোখে পড়ল না তার। সারা রাত আধোঘুমে অপেক্ষার পর এলো কাঙ্ক্ষিত ভোর। আজও একই ঘটনা দেখল সে। লম্বা সাইজের আগুনের এক কুণ্ডলী জ্বলছে পাহাড়ের মাটি হতে। সে আজ মাকে ডেকে দেখাল সে দৃশ্য। মা ভয়ার্ত গলায় বললেন- দেখেছিস, বলেছিলাম না, ও মা গো আয় ঘরে ফিরে যাই ও যে সত্যই ভূতল ভূত।

মা ভয় পেলেও অনিকের তেমন ভয় হলো না। মা অনিককে টেনে নিয়ে ঘরে গেলেন। অনিক ভাবতে লাগল ভূতল ভূত নিয়ে।

এসব ভাবতে ভাবতে স্কুলে গেল অনিক। স্কুলে স্যারকে সব বলার পরে স্যার বললেন, অনিক তুমি তো আমাদের ভালো ছাত্রদের একজন। মনোযোগ দিয়ে শুনো, বিষয়টা সহজেই বুঝতে পারবে। এ অঞ্চলে ভূতল ভূত বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। কোনো একসময় কেউ একজন মাটির নিচের অগ্ন্যুৎপাতকে ভূতল ভূত বলে গল্প করেছিলেন। তখন থেকে এখানে এ বিষয়টির আলোচনা রয়েছে। আর তুমি যেটাকে আগুন মনে করেছো সেটা হয়তো আগুন নয়। হতে পারে কোনো গ্যাসট্যাস হবে যার ভোরের সূর্যের আলোর সঙ্গে সম্পর্ক। উষার সময় হয়তো সে গ্যাসটা এভাবেই নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে আলো বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিশে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close