আরিফুর রহমান সেলিম

  ২২ জানুয়ারি, ২০২২

ইংলিশ স্যার বিংলিশ স্যার

স্কুলের নতুন স্যার এসেছেন। টকটকে ফরসা গায়ের রং। দেখতে লম্বা, সুঠাম দেহ। কিন্তু বয়সটা একেবারেই কম। কেমন যেন ছেলে বয়সি মনে হয়। কথা বলার সঙ্গে মনে হয় হাসি লেগেই থাকে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্যারকে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরিচিত করাতে নিয়ে গেলেন। প্রথমেই গেলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রগুলোর চেহারা কেমন তুলতুলে। কচি কচি মুখ। গম্ভীর মুখে হেডস্যার ছাত্রদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ‘তিনি তোমাদের নতুন শিক্ষক। স্কুলে নতুন জয়েন করেছেন। আমাদের শিক্ষকের নাম শুভ্র স্যার। তিনি তোমাদের ইংরেজি পড়াবেন।’

প্রথম দিনেই শুভ্র স্যারের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের খুব ভাব হয়ে গেল। স্যার ছাত্রদের বোঝালেন মাতৃভাষার বাংলার পাশাপাশি কেন ইংরেজি ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ।

ক্লাসের ফার্স্টবয় স্বপ্নিল স্যারকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার ইংরেজি ভাষা শিখলে আমার কী কী সুবিধা?’ ‘স্যার বললেন, ‘ইংরেজি ভাষা শিখলে তুমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে। বড় হয়ে যখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে যাবে তখন তোমাকে ইংরেজিতে লেখা বই পড়তে হবে। তুমি ভালো চাকরি পেতে হলেও ইংরেজি জানা দরকার। তা ছাড়া তুমি বিদেশে গেলে, সেখানে চাকরি করলে সেই ভিনদেশি মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হলো ইংরেজি। তাই জীবনের সর্বত্র ইংরেজি দরকার।’

এতক্ষণ সবাই মুগ্ধ হয়ে শুভ্র স্যারের কথাগুলো শুনছিল। সবাই বুঝতে পারল ইংরেজি ভাষা শেখার গুরুত্ব। সবাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল তারা যেভাবেই হোক ইংরেজি ভাষা শিখবে।

ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল নাফিসা। সে তার চোখের চশমাটা একটু নেড়েচেড়ে দাঁড়িয়ে স্যারকে বলল, ‘স্যার আমি একটা কথা বলতে চাই।’ স্যার বললেন, ‘বলো।’ তখন নাফিসা বলল, ‘স্যার আমরা তো ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। আমরা কেন বাংলা ছেড়ে ইংরেজি ভাষা এত গুরুত্ব দেব?’

নাফিসার প্রশ্ন শুনে শুভ্র স্যার খুব খুশি হলো। নাফিসাকে ধন্যবাদ দিল এমন সুন্দর একটা প্রশ্ন করার জন্য। এবার স্যার নাফিসার প্রশ্নের উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, ‘বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন... আগে চাই মাতৃভাষার গাঁথুনি পরে চাই অন্য ভাষার চর্চা। তাই প্রথমেই আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে খুব ভালোভাবে শিখতে হবে। আর উচ্চশিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে যেহেতু ইংরেজি ছাড়া বিকল্প নেই, তাই আমাদের ইংরেজি শেখাটাও জরুরি।’ স্যারের এমন সুন্দর উত্তর শুনে সবাই হাততালি দিল। সেদিনের মতো ক্লাস শেষ হয়ে গেল।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা সব সময় অপেক্ষায় থাকে কখন তাদের প্রিয় শুভ্র স্যার তাদের ক্লাসে আসবে। আজকে স্যার প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের বললেন, ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য তাদের কী কী করতে হবে। স্যার ছাত্রীদের একটা তালিকা তৈরি করে দিলেন।

১. প্রচুর ইংরেজি শব্দ জানতে হবে সেজন্য নিয়ম করে ইংরেজি শব্দ ও তার অর্থ শিখতে হবে।

২. ইংরেজি ব্যাকরণ শিখতে হবে।

৩. শিক্ষক, সহপাঠী, পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে।

৪. ইংরেজি সংবাদপত্র পড়তে হবে, ইংরেজি কার্টুন, চলচ্চিত্র, রেডিও তে ইংরেজি অনুষ্ঠান শুনতে হবে।

শুভ্র স্যার বললেন, আমি আজ তোমাদের একটা গান শোনাব। স্যার তার মিষ্টিকণ্ঠে গেয়ে শোনালেন... আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে.../নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?’

ছেলেমেয়দের মধ্যে ইংরেজি শেখার খুব আগ্রহ তৈরি হলো। একজন আরেকজন সহপাঠীর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলে। যদিও অনেক ভুল হয় তবু তারা ইংরেজি শেখার চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র স্যার নিয়মিতই ক্লাসে ইংরেজিতে কথা বলে।

ক্লাসে স্যার যেমন ইংরেজি পড়ান ঠিক; তেমনি স্যার তার নিজের লেখা গল্প, কবিতা, ছড়া ছাত্রছাত্রীদের পড়ে শোনান। এ স্কুলের ইতিহাসে এমন মজার স্যার কখনো আসেনি।

এক দিন ক্লাসের সবচেয়ে ছোট্ট মেয়ে অর্পিতা দাঁড়িয়ে বলল স্যার আপনাকে আমরা কি নামে ডাকি জানেন? স্যার বলল, ‘হুম জানি, শুভ্র স্যার’। জি না স্যার আমরা আপনাকে অন্য নামে ডাকি। স্যার বললেন অন্য কি নামে ডাকো।

এবার অর্পিতা সামনে পেছনের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, ‘স্যার আপনাকে আমরা ইংলিশ স্যার বিংলিশ স্যার নামে ডাকি।’ অর্পিতার কথা শুনে সারা ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ল। শুভ্র স্যারও সঙ্গে সঙ্গে হাসল।

স্যার অর্পিতাকে জিজ্ঞাসা করল এ নামে কেন ডাকো আমি কি জানতে পারি? অর্পিতা বলল, ‘স্যার আপনি আমাদের যেভাবে সুন্দর করে ইংরেজি শেখান, তেমনি সুন্দর করে বাংলাও শেখান। তাই ইংরেজিকে ইংলিশ ও বাংলাকে বিংলিশ বলে আমরা আপনার নাম দিয়েছি... ইংলিশ স্যার বিংলিশ স্যার।

স্কুলে তারপর থেকে সুন্দরভাবে পড়াশোনা চলতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close