জামসেদুর রহমান

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ব্যাঙের ছাতা

কোলাব্যাঙ পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য টুনি ব্যাঙের মন খারাপ। ভাইবোনরা যেখানে সারা দিন খেলাধুলা আর হইচই নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে টুনি মাটির উঁচু এক ঢিবির ওপর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। এই ঢিবিতেই বেশির ভাগ সময় কাটে ওর। একা বসে বসে হাজার রকম চিন্তা করে সে। কিন্তু টুনি ভেবে পায় না ওর সঙ্গেই কেন এমন হয়! কি এমন আবদারই বা করেছে সে? কেবল ছোট্ট একটা ছাতা চেয়েছে বাবার কাছে।

ইদানীং হুট করেই অঝোরধারায় বৃষ্টি নামে। এতই বৃষ্টি পড়ে যেন কেউ মেঘগুলোকে সুঁই দিয়ে ফুটো করে দিয়েছে। কোনো কোনো দিন তো সারাবেলা বৃষ্টি হয়। অথচ এর পরও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেনি টুনি। বৃষ্টিতে ভিজেপুড়ে স্কুলে যায়। ক্লাস করে। মানুষের কত আরাম! তারা ছাতি মাথায়, না হয় রেইনকোট পরে স্কুলে যায়। কংক্রিটের চার দেয়ালের মধ্যে ক্লাস করে। ওপরে ছাদ থাকায় বৃষ্টির পানিতে ভিজতে হয় না। ব্যাঙেদের এত সুবিধা নেই। টুনি ভাবে, তাও তো ভাগ্য কিছুটা ভালো যে বৃষ্টিতে ব্যাঙদের সর্দি-কাশি হয় না। না হলে কি ভোগান্তিটাই না হতো।

টুনির সঙ্গে ওর যেসব বন্ধুবান্ধব স্কুলে যায় তাদের প্রত্যেকের ছাতা আছে। তারা ছাতা মাথায় দিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামের সবচেয়ে বড় খালটায় যায়, সেখানেই ওদের স্কুল। খালের একেবারে গা-ঘেঁষে। বন্ধুদের কাছে ছাতি দেখে টুনিও ওর বাবার কাছে আবদার করে ওকেও একটা ছাতি এনে দিতে হবে। টুনির বাবা অবশ্য ওর আবদার পূরণে কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু শত খুঁজেও মাশরুম বা ছত্রাকের ছিটে-ফোঁটাও মেলেনি কোথাও। সাধারণত বৃষ্টির সময়ে স্যাঁতসেঁতে, নরম কাদা মাটিতে ছত্রাক বা মাশরুম জন্মে। মানুষরা এটাকে ব্যাঙের ছাতা বলে। সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনা হলো ব্যাঙরা সত্যিই এটাকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, যেমনটা টুনির বন্ধুরা করেছে। অথচ টুনির ভাগ্যেই কি না ছাতা জুটছে না। রোজ ওর বাবা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে বাড়ি ফেরে। সেই অবস্থা দেখে টুনিরও মন খারাপ হয়।

কিছুদিন ধরে একটানা বৃষ্টি পড়ায় ব্যাঙদের মহল্লায় খুশির ধুম পড়ে গেছে। বেশি পানি মানেই বেশি বেশি আনন্দ। টুনির বাবা-মাও অনেক খুশি। সবখানে পানি জমে গেছে। এ সময় পরিবারে নতুন সদস্যদের আগমন হয়। টুনির ভাইবোনরা তো মহাখুশি, কিছুদিন পরই তাদের পরিবারে নতুন নতুন ভাইবোন আসবে। কোলাব্যাঙ গোষ্ঠীর সবাই মিলে সারা দিন হইচই, ডাকাডাকি, আনন্দ-উল্লাস। ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শব্দে কানে রীতিমতো তালা লাগার মতো অবস্থা। অথচ এত কিছুর মাঝেও টুনির মুখে হাসি নেই। আকাশের কালো মেঘের মতো টুনির চেহারাটাও কষ্টে কালো হয়ে আছে যেন!

বন্ধুরা স্কুলে যাওয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করেও টুনিকে সঙ্গে নিতে পারল না। টুনি কোনো রকম চোখের পানি আড়াল করে উঁচু ঢিবিটার দিকে ছুট লাগল। যাওয়ার সময় পেছন ফিরে দেখল ওর সব বন্ধু ছাতি মাথায় স্কুলের দিকে রওনা হচ্ছে। খুব কষ্ট লাগে ওর। কান্নায় চোখ ভিজে ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশ। ঢিবিতে পৌঁছে ছোট্ট একটা কচুগাছের গোড়ায় বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। একপর্যায়ে কান্না থামিয়ে চোখের জল মোছে। সামনের দিকটায় নজর যেতেই চমকে ওঠে টুনি! ভূত দেখার মতো চেহারা বানিয়ে ফেলে, একেবারে থ হয়ে যায়। স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি কিছু বুঝে উঠতে পারে না। যদি এটা স্বপ্ন না হয়ে বাস্তব হয়ে থাকে, তাহলে ওর ঠিক সামনের কচুগাছটার নিচে কয়েকটা ছত্রাক গজিয়ে উঠেছে। টুনির সেই বহু কাক্সিক্ষত ছাতা! তাও আবার একটা-দুটো না, সাত-আটটার মতো। খুশিতে ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করে টুনি। ছুটে গিয়ে একটা ছাতা তুলে নেয়। তারপর ঝড়ের বেগে ছুটতে থাকে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে। আজকে সেও স্কুলে যাবে, ক্লাস করবে, আর সবার মতো ছাতি মাথায় দিয়ে! এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close