reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ অক্টোবর, ২০২০

মৎস্যকন্যা ও রাজকুমার

দিপংকর দাশ

বিশাল সাগরের নিচে এক বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে মৎস্যনগরী। এক বিরাট ডলফিন সে নগরীর রাজা। ডলফিনের স্ত্রী মিলানা অপরূপ সুন্দরী। মিলানা জন্ম থেকে মৎস্য ছিল না। সে ছিল ইব্রিকাল রাজ্যের সম্রাট মিলবাহুর একমাত্র মেয়ে। মিলানা যেদিন জন্মগ্রহণ করে, সেদিন ছিল অমাবস্যা। অন্ধকারে ঢাকা রাজমহলে মোমবাতি যখন নিভু নিভু অবস্থায় জ্বলছিল, তখন পুরো রাজমহল আলোকিত করে জন্ম নেয় মিলানা। তার জন্মের পর রাজমহলে হই-হুল্লোড় পড়ে যায়। সারা রাজ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, রাজকন্যা আমাদের রাজ্যকে আলোকিত করতে জন্মেছেন। তার উপস্থিতিতে রাজ্যে কোনোদিন অন্ধকার আসবে না।

মিলানা খুব আদরের সহিত বড় হতে থাকে। বারো বছর বয়সে এক দিন মিলানা তাদের বাগানের পাশে খেলছিল। হঠাৎ তার এক সখী পুকুরে পড়ে যায়। মিলানা সাঁতার জানত না, তাই সে তার সখীকে বাঁচাতে পারেনি। যদিও সে চিৎকার করেছিল, কিন্তু আশপাশে কেউ না থাকায় মিলানার চোখের সামনে তার প্রিয় সখী পানিতে তলিয়ে যায়। সখীর এই মৃত্যুতে মিলানা খুব কষ্ট পায়। সে তার প্রিয় সখীর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দোষ দিতে থাকে।

কয়েক দিন কেটে যায়। মিলানা তার সখীর কথা ভুলতে পারছে না। এক দিন মিলানা সেই পুকুর পাড়ে বসে কী জানি ভাবছিল। হঠাৎ সে দেখতে পায় তার সখী পুকুর থেকে উঠে এসেছে। তার পাশে বসে বলছে, হে সখী, তুমি আমাকে ছেড়ে খুব ভালো আছো তাই না?

ভালো না সখী। তোমাকে খুব মনে পড়ে।

তাহলে চলে আসো আমার কাছে।

সত্যি? তুমি আমাকে নেবে তোমার কাছে?

হ্যাঁ, কিন্তু আমার কাছে এলে তুমি আর মানুষ থাকতে পারবে না। মৎস্য হয়ে যাবে। তবে তোমার যখন ইচ্ছে হবে তখন অর্ধেক শরীর মানুষের মতো বানাতে পারবে।

আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও সখী। আমি যেতে চাই।

যেই কথা সেই কাজ, সখী মিলানাকে তার জাদুর লাঠি দিয়ে কী জানি এক মন্ত্রবলে তাকেও মৎস্য বানিয়ে দেয়। তারপর তারা পুকুর থেকে সমুদ্রে চলে যায়।

এদিকে সারা রাজ্যে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে যে মিলানা হারিয়ে গেছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী খুব কষ্ট পান। সারা রাজ্যে শোক বহে যায়।

মিলানা ও তার সখী সাগরে বাস করার জন্য একটি সুন্দর জায়গা খুঁজতে থাকে। অবশেষে তারা মৎস্য রাজ্যের সন্ধান পায়। সেখানে যাওয়ার পর রাজা ডলফিন মিলানাকে বিয়ে করে। প্রায় তিন বছর কেটে যায়। মিলানার কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে মেয়ে। সেই মেয়ের অর্ধেক শরীর মৎস্যের মতো আর অর্ধেক শরীর মানুষের মতো। এই মৎসকন্যাকে দেখে সব মৎস্য বিস্মিত হয়। মৎস্যরাজ্যে রোল পড়ে যায় এই আজগুবি মেয়েকে দেখে। মিলানা খুব খুশি হয়। সে তার মেয়ের নাম রাখে মিকালা। বেশ আনন্দের সঙ্গে মিকালা বড় হতে থাকে। মিকালাও দেখতে অপরূপ সুন্দরী। সে মাঝেমধ্যে সাগরের কোলঘেঁষে ওপরে উঠে আসে বাইরের জগৎটাকে দেখার জন্য। তার শরীরের ওপরের অংশ পানির ওপরে রেখে সে দেখে গাছ, পাখি ও পাড়ে আসা মানুষের দৃশ্য।

একদিন এক সুদর্শন রাজকুমার সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আসে। সেই রাজকুমার সমুদ্রের কোলঘেঁষে হাঁটছিল। হঠাৎ মিকালাকে চোখে পড়ে। সে ভাবে এক অপরূপ সুন্দরী একা সমুদ্রে কী করছে? সে মিলাকার রূপে মুগ্ধ হয়ে যায়। মিলাকার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কাছে যায়। কিন্তু মিলাকা রাজপুত্রকে দেখে পানির নিচে চলে যায়। রাজপুত্র অবাক হয়। সে অনেক খোঁজাখুঁজি করে? কিন্তু কোথাও পায়নি। পরের দিন আবার রাজপুত্র মিলাকার খুঁজে সমুদ্রে আসে। মিলাকা প্রতিদিনকার মতো কিনারায় এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করছিল। রাজপুত্র তাকে দেখে। সে দূর থেকে চিৎকার করে বলে, হে রূপসী, তুমি আমাকে দেখে পালিয়ে যেও না। আমি তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।

মিলাকা এবার আর পানির নিচে না গিয়ে তার কথাতে সাড়া দেয়। তারপর রাজকুমার তার কাছে আসে। অনেক গল্প হয় তাদের মধ্যে। মিলাকা তার নিজের মৎস্যরাজ্যের কথা রাজপুত্রকে খুলে বলে। তা ছাড়া তার অর্ধ শরীর মানুষ ও অর্ধশরীর মৎস্যের মতো তাও দেখায়। সবকিছু জেনেও রাজপুত্র মিলাকাকে বিয়ে করতে চায়। মিলাকার পিঠে বসে রাজকুমার মৎস্যরাজ্যে যায়। রাজা ডলফিন ও রানি মিলানার সঙ্গে আলাপ করে বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। এদিকে রাজপুত্রের এই আজগুবি বিয়ের কথা শুনে সারা রাজ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে যায়। প্রজারা বিদ্রোহ করতে থাকে। প্রজাদের বিদ্রোহের তোপে রাজা তার ছেলেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, ত্যাজ্যপুত্র করে দেয়। রাজপুত্র তার রাজ্য ছেড়ে চলে যায় মৎস্যরাজ্য। বিয়ে হয় মিলাকার সঙ্গে। সেখানে সুখে শান্তিতে চলতে থাকে তাদের জীবন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close