মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

  ১৩ জুলাই, ২০২২

মীমের ছবিতে প্রাণের ছোঁয়া

ছোটবেলায় তিনি একটি মুরগির ছবি এঁকেছিলেন। এত সুন্দর ছবি। মা, নানু বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। ছোট মেয়েটি এত সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। ছোটবেলা থেকেই তার আঁকাআঁকি শুরু। এখন ছবি এঁকে তিনি আয় করেন। তাও মাসে প্রায় বারো হাজার টাকা। পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে। মেধাবী এই শিল্পীর নাম নুসরাত জাহান মীম। তার বাবা মোঃ জিয়া মোর্শেদ। অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। মা, আর ছোট বোনদের নিয়ে মীম কুমিল্লাতে বসবাস করেন।

ছবি আঁকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই তার। দিনের পর দিন চেষ্টা করে ছবি আঁকা রপ্ত করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি বেশ জোরালোভাবে আঁকাআঁকি শুরু করেন। কুমিল্লায় ধর্মসাগর পাড়ে এক উন্মুক্ত আর্ট ক্যাম্প হয়েছিল। ওই আর্ট ক্যাম্পে তিনি অংশগ্রহণ করেন। আর্ট নিয়ে মূলত পরিকল্পনা তখন থেকেই তার শুরু। স্কুলে থাকতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বাসার কাউকে না জানিয়ে। সেখানে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। সব মাধ্যমেই তিনি ছবি আঁকতে পারেন। পেন্সিল, এক্রিলিক, অয়েল, ওয়াটার কালার ইত্যাদিতে ভালো আঁকেন। কফি দিয়ে তার আঁকা মহীয়সী নারী জাহানারা ইমামের ছবি জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি ২৫০টির মতো ছবি এঁকেছেন। মীম বলেন, ছবি আঁকা আমার শখ ছিল। এখন তা প্রায় পেশায় পরিণত হয়েছে। বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ছবি আঁকা তার পছন্দ। তবে ক্রেতা যেভাবে বলেন সেভাবেও এঁকে দেন। কি করলে ছবিটা আরো সুন্দর হতে পারে- সে বিষয়ে ক্রেতাকে পরামর্শও দেন তিনি। তার বড় ছবির সাইজ হলো ২৪*৩০ ইঞ্চি। ছবির স্থায়িত্ব অনেক ভালো বলে জানান। ফ্রেমসহ ছবি বিক্রি করেন। ফেসবুকে তার পেইজের নাম Nusrat The Artist. পরিচিতজনেরা ফোনে অর্ডার দেন। আবার ফেসবুক ইনবক্সেও অর্ডার দেওয়া যায়। ছবিটি কেমন হবে তার ওপর মূল্য নির্ভর করে। তার বিক্রীত ছবির সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ১২,০০০ (বারো হাজার) টাকা। ছবি আঁকার মাধ্যমে তিনি মনের প্রশান্তি খুঁজে পান। সে কারণে ছবি আঁকাকে বেছে নিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ছবি আঁকার মাধ্যমে আমি প্রশান্তি খুঁজে পাই। সে জন্য ছবি আঁকাকে বেছে নিয়েছি। তার ছবি অনেক বিখ্যাতজনদের মন ছুঁয়ে গেছে। তেমনই একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক আনিসুল হক। মীম বলেন, আমার ছবি দেখে আনিসুল হক বলেছেন, অসাধারণ ছবি, এগিয়ে যাও। মীমের একটি বিখ্যত ছবি হলো মুসলমানদের কেবলা- পবিত্র কাবার ছবি। তার এই ছবিটি ব্র্যাক এলোরিন আর্ট ইন্টারন্যাশনাল উইন্টার পেস্ট-এ স্থান পেয়েছিল। ছবিটি সবার নজর কাড়ে। ব্যাপকভাবে তিনি প্রশংসিত হন নানাজন থেকে। কুমিল্লা চারুশিল্প কর্তৃক আয়োজিত শিল্পকলা একাডেমিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০০ শিল্পীর ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে তার অসহায়ত্ব শিরোনামে একটি ছবি ছিল। যেটাতে শিশু নির্যাতনের খন্ড চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। এ ছবিটিও সবার প্রশংসা পেয়েছে। ফটোগ্রাফি এবং রান্না- এ দুটিও মীমের শখের কাজ। বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নিয়েছেন। রান্না নিয়ে তার লেখা জাতীয় পত্রিকায় ছ্পাা হয়েছে। কুমিল্লায় ‘মার্ক ডেজার্ট কুইন’ কর্তৃক আয়োজিত একটি রান্নার প্রোগ্রামে মীম অংশ নেন। সেখানে ৩য় রানার আপ নির্বাচিত হয়েছেন। তার একটি সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান আছে- যার মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সাহায্য করা হয়। মীম তার আায়ের সত্তর ভাগ ওই প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যয় করেন। গরিব-দুঃখীদের মুখে হাসি ফুটাতে তার চেষ্টার অন্ত নেই। তিনি অসহায় মহিলাদের সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছেন। যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে। ইফতার বিতরণ, ঈদ উপলক্ষে অসহায় মানুষদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ইত্যাদি তার সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কাজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close