নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ জুলাই, ২০১৭

চলতি বছরের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন

হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতার ধারা অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

‘ইসলাম ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ’

২০১৭ সালের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ইসলাম ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দূর করে হজযাত্রীদের জন্য উন্নত মানের আবাসনের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর আশকোনায় হজক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যাচ্ছেন। সোমবার সকালে ৪১৮ জনের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ বছরের হজযাত্রা।

ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের সরকারের সময়ে হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজযাত্রী প্রেরণ করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন, ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন।’ একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে জাতির পিতা ইসলামের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন বলেও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

নিজের সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা যাতে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে, জীবনে চাকরি ও ভালো কাজের সুযোগ পায়; সেই সুযোগটা আমরা তাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছি।’ মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করব। যেখানে প্রকৃত ইসলামের ধারণাটা মানুষে পেতে পারে।’

১৯৮৪ সালে প্রথম ওমরাহ এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বহুবার হজ পালন করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু পিতা-মাতা সবাইকেই হারিয়েছি, তাই তাদের জন্য আমাকে বারবার বদলি হজ করতে হয়েছে।’ হজ পালনের অভিজ্ঞতা থেকে হজযাত্রীদের নানা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাঁবুগুলোতে ঘুরতাম। যা যা সমস্যা দেখতাম, এসে সৌদি বাদশার কাছে চিঠি লিখতাম। আমি সরকারে ছিলাম না, তার পরও আমি চেষ্টা করতাম।’ হাজিদের সুবিধায় হজ উইংয়ের অফিস জেদ্দা হতে মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে স্থানান্তরের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা সব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দূর করে হজযাত্রীদের জন্য উন্নত মানের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আগামীতেও হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতার ধারা অব্যাহত থাকবে।’

অতীতে হাজিদের বাড়িভাড়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরতে গিয়ে দূরবর্তী, পুরনো ও পাহাড়ের ওপর বাড়িভাড়া করার কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরে তাদের নিরাপদে ফেরার আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা পবিত্র মাটিতে যাচ্ছেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে। আপনারা দেশের জন্য দোয়া করবেন।’

ইসলামের নামে জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে মানুষ হত্যার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ধর্মের নাম নিয়ে অহেতুক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা; এই ধরনের কর্মকান্ড যেন না হয়। কারণ এই ধরনের কর্মকান্ডের ফলে নিরীহ মুসলমানদের নানা জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়, হেনস্তা হতে হয়, এমনকি জীবনও দিতে হয়। কয়েকটা ভ্রান্ত লোকের কারণে আজকে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে কোনোমতে সন্ত্রাস হতে দেব না। আর আত্মঘাতী হওয়া, এটা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।’

বাংলাদেশে যেন সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে যেতে পারে, সেজন্যও দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা ধর্মের নামে বিভ্রান্তির পথে যাচ্ছে, আল্লাহ যাতে তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনেন।’ হজযাত্রীদের আবগারি শুল্ক (বিমান ভাড়ায়) এক হাজার টাকা মওকুফ করে দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই বাজেটে এক্সাইজ ডিউটি যেটা আগে এক হাজার টাকা ছিল, সেটাকে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। যেহেতু এবার হজ প্যাকেজ আগেই ঘোষণা করা হয়েছে, আপনারা হাজিরা আগেই টাকা জমা দিয়েছেন। সেজন্য অতিরিক্ত টাকা যাতে এবার না দিতে হয়, সেজন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে বলব, মাত্র এক হাজার টাকা দিতে কারো কোনো অসুবিধা নেই। তার পরও এবার যেহেতু সব ব্যবস্থাপনা হয়ে গেছে, এই সুযোগ নিয়ে অনেকে ঝামেলা করতে পারে। যাতে ঝামেলা করতে না পারে, সেজন্য এটা যাতে অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেজন্য ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’

২০১০ সালে জাতীয় হজনীতিকে আরো যুগোপযোগী ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি’ প্রণয়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হজবিষয়ক ওয়েব পোর্টাল www.hajj.gov.bd-এ সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। হজ নিয়ে মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমেও প্রত্যাশিত তথ্য পাচ্ছেন। হজযাত্রীদের নিবন্ধন ডিজিটাইজ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে হজ প্যাকেজের সম্পূর্ণ টাকা জমা দিয়েও অনেক সময় প্রতারিত হতে হতো, প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালুর ফলে প্রতারণা বন্ধ হয়েছে।’ বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য মক্কা-মদিনায় সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করে ঘুরে ঘুরে হজযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বি এইচ হারুন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন, সৌদি দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আবদুল্লাহ আল মুতাইরি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল জলিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist