নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ মার্চ, ২০২৪

আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭১ সালে তার স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং দলের লোকেরা তা দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু তাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। কাজেই কোনো এক মেজর একটি ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁ দিল আর অমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল! এভাবে একটি দেশ স্বাধীন হয় না। এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড বিএনপি বাজিয়েই যাচ্ছে। গতকাল বুধবার ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান যা ইপিআরের ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম-টেলিপ্রিন্টার এবং দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর এই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আগে আক্রমণকারী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাননি বিধায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ধাপে ধাপে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। ২৫ মার্চ অকস্মাৎ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের (বর্তমান বিজিবি) ওয়্যারলেস যোগে দেশব্যাপী প্রচার করা হয়। সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ চারজনের কাছে এই বার্তাটি আগেই পাঠিয়ে দেওয়া ছিল। ওয়্যারলেস ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশে যখন ইপিআর মেসেজ পাঠাচ্ছিল তখন ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পাশাপাশি পিলখানা এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনও পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে, গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম-টেলিপ্রিন্টার ও পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে মাধ্যমে সারা দেশে এই বার্তাটা ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে সারা দেশে এটি প্রচার করে এবং সুবেদার শওকতসহ বার্তা প্রচারকারীরা ধরা পড়ে যায় এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহাদত বরণ করেন। আর এই ইতিহাসকে ৭৫ এর পরে বিকৃত করা হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে একটি ভিন্ন ইতিহাসকে সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যিনি বলেন একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতারা সব পালিয়ে যান, সেই মঈন খানের বাবা মমিন খান খাদ্য সচিব ছিলেন। যিনি খাদ্য সচিবের দায়িত্ব পালনকালে ৭৪ এর কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে সফল হওয়ায় পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে তার দ্বারা পুরস্কৃত হয়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। অথচ ৭৫-এর পর থেকে সারা বছরই বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে প্রবাস জীবন থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে জোর করে দেশে ফেরার পর দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরেছি এবং বছরের পর বছর দুর্ভিক্ষ দেখতে পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সংসদ সদস্যরাই কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করেন। যার রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ সরকারের সদস্যরা মুজিবনগরে শপথ নেন এবং জাতির পিতা কারাগারে অন্তরীণ থাকায় তারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে একেকজনকে একেকটি সেক্টরের দায়িত্ব দেয়। সেক্টরের যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান একটি সেক্টরের দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমান সেখানে তো একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল জিয়াউর রহমান। তাছাড়া জিয়া একজন সামান্য মেজর ছিলেন। এখান থেকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি কিন্তু তাকে আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। আর স্বাধীনতার আগে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে কার্যাদেশ পেয়ে পূর্ববঙ্গে দায়িত্ব পালনরত ছিলেন, তার জন্ম ছিল কলকাতায়, এরপর পরিবার করাচিতে চলে যায় এবং তার লেখাপড়া ও সেনাবাহিনীতে যোগদান সবকিছুই পাকিস্তানে ছিল। কাজেই তার মনে ওই পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে আর তার প্রমাণও আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যখন এখানে গণহত্যা শুরু করে, তারা কিন্তু চট্টগ্রামেও হত্যাকান্ড শুরু করেছিল। যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে, তাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। আর চট্টগ্রামে সেই সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা জিয়াউর রহমান তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। শুধু তাই না সোয়াত জাহাজ এসেছে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র নিয়ে, সেই অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সেখানে এই যে সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও অন্যান্য সাধারণ জনগণ তারা তাকে পথে আটকায়। তাকে যেতে দেয়নি, বাধা দিয়েছিল এবং সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, যখন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম ২৬ মার্চ দুপুর ২টা-আড়াইটার সময় মান্নান সাহেব চট্টগ্রামের সেক্রেটারি ঘোষণা দেওয়া শুরু করে। একে একে আমাদের যারা নেতা সবাই ঘোষণা পাঠ করে। সে সময় জহুর আহমেদ সাহেব বলেন, আমাদের একজন মিলিটারি লোক দরকার। তখন মেজর রফিককে বলা হয়, তিনি তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আটকানোর জন্য অ্যাম্বুস করে বসে আছেন। তিনি বলেছেন, আমি এখান থেকে নড়লে এই জায়গাটা ওরা দখল করে নেবে। ওই সময় জিয়াউর রহমানকে ধরে আনা হয় এবং তাকে দিয়ে ২৭ তারিখ সন্ধ্যার পরে জাতির পিতার পক্ষে ঘোষণাটা পাঠ করানো হয়। কাজেই এটা নিয়ে বড়াই করার তো কিছু নেই! তারা এটা নিয়েই বড়াই করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বর্ষিয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close