মেহেদী হাসান

  ১৬ মার্চ, ২০২৪

টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তের ভিড়

ঘর-সংসারের জন্য অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষের সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও লাগাম টানতে ব্যার্থ। স্বল্প আয়ের মানুষের অতীব প্রয়োজনীয় ডাল, তেল, আটা, চিনিসহ কয়েকটি পণ্য কিনতে একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বাজারের নাজেহাল পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেছে মধ্যবিত্তরা।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর ১৫নং ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। টিসিবির লাইনে ভিড় দেখে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আর এই ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। কারণ সরকার ভর্তুকি দিয়ে বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য বেচে টিসিবি। ভর্তুকি দেওয়া দামে চাল-ডাল-আটা-চিনি-তেল কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে বহু মানুষ।

বেসরকারি এক কোম্পানিতে চাকরি করেন হাসানুল হক। তিনিও টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছেন তেল, ডাল, চিনি আর খেজুর কিনতে। অন্তত ৩০০ টাকা বাঁচাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তার। হাসানুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। আমাদের মতো যারা ২০ হাজারের ওপর বেতনের চাকরি করে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমেছে কিন্তু তাতে কী হবে! কিন্তু ১০০ টাকা লিটার তেল টিসিবি দিচ্ছে তাতে দুই লিটারে ১২০ টাকা কম, আবার ডাল ৬০ টাকা কিনলে ৫০ টাকা কম পাচ্ছি। আবার বাজারে ৪০০ টাকা কেজির কম খেজুর নেই, এখানে ১৫০ টাকা কিনতে পারছি। সবগুলো জিনিস কিনলে বাজারমূল্যের তুলনায় ৩০০ টাকা কম দামে কিনতে পারছি। আগে আমার টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। এখন কিছু করার নেই। সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রহিমা বেগম (ছদ্মনাম) জানালেন, করোনার আগে তাদের পরিবারে এমন অর্থকষ্ট ছিল না। একান্ত বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। মেয়ের পড়ালেখার খরচ বেড়েছে, বাড়িভাড়া, বিদুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল পরিশোধ করতেই সংসারে আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে খাদ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে। কিছুটা কম পেতেই এই টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছেন এই নারী।

রোকেয়া বেগম নামের এক নারী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এখানে মেয়ে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। মুখ বেঁধে আছেন অনেকে। সবাই টিসিবির পণ্য নিতেই এসেছে। আমরা বাজারের চেয়ে বেশ কম দামে এখানে ডাল, তেল, চিনি, আটা কিনতে পারি তাই আসি। একেক সময় একেক জিনিস দেয়। কখনো ডাল, তেল, চিনি দেয় আবার কখনো আটা, তেল, চাল দেয়। আমরা যা পাই সেটাই কাজে লাগে। কম দামে পাওয়া যায় টিসিবি। লজ্জা করে লাভ নেই, জীবন বাঁচাতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিজীবী বলেন, করোনার পর থেকে দেশে যা শুরু হয়েছে তাতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলে কিছু নেই। টিসিবির লাইন দেখে বুঝতে পারছেন না? যারা ৩০ হাজার টাকা বেতন পায় তাদের বাড়িভাড়া, বিদুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানি বিল, অফিসে যাতায়াতের পরিবহন ভাড়া পরিশোধের পর সংসার নিয়ে কোনোমতে টিকে আছে। বাজারে সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। ৫ হাজার টাকায় মাসের বাজার হয় না। মানুষ কেমন আছে- এই প্রশ্ন করলে বিব্রতবোধ করে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের বিক্রি কার্যক্রম থেকে একজন ফ্যামিলি কার্ডধারী ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ লিটার সয়াবিন তেল বা রাইসব্রান তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি ছোলা এবং ৫ কেজি চাল কিনতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বা রাইসব্রান তেল ১০০ টাকা এবং প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, ছোলা ৫৫ টাকা ও চাল ৩০ টাকায় বিক্রি করেছে টিসিবি। গত মাসে চিনি ও পেঁয়াজ টিসিবির বিক্রয় সেবার মধ্যে না থাকলেও রমজানে তা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে চিনি ৭০ টাকা ও খেজুর ১৫০ টাকায় কিনতে পারছে সাধারণ মানুষ।

টিসিবি সূত্র বলছে, টিসিবি ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য পৃথক ৪টি দরপত্রের মাধ্যমে ১৬ হাজার টন মসুর ডাল, ৮ হাজার টন চিনি ও ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ৫০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

জানতে চাইলে টিসিবির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ঢাকার ১২৯টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ১ হাজার ২৫০ ডিলার রয়েছে যারা তেল, চিনি, ডাল, খেজুর সুলভ মূল্যে বিক্রি করছে। ঢাকার ১৩ লাখ ও ঢাকাসহ দেশে মোট ১ কোটি পরিবার ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি পণ্য পাচ্ছে। সরকারের উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close