গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

নতুন এমপিদের প্রতিক্রিয়া

অধিবেশনে বসতে উদগ্রীব বুঝে নিচ্ছেন সংসদীয় রীতি

যারা প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে অনেকেই উদগ্রীব হয়ে আছেন। কর্মব্যস্ত সময় ফেলে অনেকেই রাজধানী ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। অধিবেশনে যোগদানের জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতির সঙ্গে জেনে নিচ্ছেন জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী ও রীতি রেওয়াজ।

সংসদীয় রীতিনীতি, সংসদে কথা বলার পদ্ধতি ও কার্যপ্রণালি বিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতেও পরিচিত জনদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন কেউ কেউ। এর বাইরে সংসদ সচিবালয় থেকেও নির্বাচিত জন-প্রতিনিধিদের দু’দিনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার এবং আজ সোমবার দু’দিনের কর্মশালায় তাদের প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হচ্ছে সংসদীয় রীতি-নীতি সম্পর্কে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। এর আগে সংসদীয় কার্য-উপদেষ্টা কমিটির সভায় নির্ধারণ হবে চলতি সংসদের এ অধিবেশন কতদিন চলবে।

বছরের প্রথম এবং নতুন সংসদের প্রথম কর্মদিবস কিছুটা ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। কারণ এদিন রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ প্রদান করেন। তাকে বরণ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছে। মহামান্যের দেওয়া এ ভাষণের ওপরে সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। ফলে অন্য যেকোনো অধিবেশন থেকে এটি দীর্ঘতম হয়ে থাকে। গতকাল রবিবার প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচিত হওয়া কয়েকজন আইনপ্রণেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তার সবাই বলেছেন, যারা রাজনীতি করেন তাদের সবার একটাই স্বপ্ন থাকে সংসদ সদস্য হওয়ার। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমাদেরকে বিজয়ী করে মহান সংসদে পাঠিয়েছেন। এখানে জনগণের চাওয়াটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলব। রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তর সংসদ। রাষ্ট্রের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণ করে দেওয়া হয় এ সংসদ থেকেই। সার্বভৌম সংসদ গণতন্ত্রের মূল সূতিকাগার।

সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা) আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, মানুষ ভোট দিয়েছেন প্রাণভরে। তাদের মনের কথা আমরা সংসদে তুলে ধরব। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের চাওয়া-পাওয়ার কথা ও তাদের উন্নয়নের কথা এখানে বলব। যখন আমরা এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের প্রত্যাশার কথাগুলো সংসদে তুলে ধরব নিশ্চয়ই তারা খুশি হবেন।

প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ায় আপনার অভিব্যক্তি কি জানতে চাইলে এ সংসদ সদস্য বলেন, অবশ্যই ভালো লাগার কথা। রাজনীতি করেছি দীর্ঘদিন। প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে অধিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি। এরপর কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আর রাজনীতির হাতেখড়ি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দিয়ে। প্রথমে কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পরে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলাম আমি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এবং তিনবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি নিষ্ঠার সঙ্গে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রেখে এবার নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেন; এ জন্য তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। স্বপ্ন দেখছি, এমপি হয়ে সংসদে যোগদানের জন্য এখন অপেক্ষায় প্রহর গুণছি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, ‘রাজনীতি যারাই করেন প্রত্যেকের একটাই স্বপ্ন থাকে এমপি হওয়ার। ১৯৬৯ সাল থেকে ছাত্র ইউনিয়ন দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। এরপর ধারাবাহিকভাবে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনীতিতে যুক্ত হই। সেই থেকেই এ দলই আমার শেকড়। জনগণের ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে সংসদে এসেছি। সংসদ সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। জনগণের প্রত্যাশাপূরণের জায়গা এটি। বলেন, অধির আগ্রহে অপেক্ষায় আছি নতুন সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদ অধিবেশনে যোগদানের জন্য। সংসদের কিছু রেওয়াজ বা রীতি রয়েছে। সেগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করছি। সংসদীয় রীতি মেনেই চলতে চাই। পুরো পাঁচটি বছর সংসদকে প্রাণবন্ত রাখতে সচেষ্ট থাকব। আইন-প্রণয়ন কার্যাবলীতে রাখতে চাই ভূমিকা। সিনিয়র সদস্যরা সংসদে কিভাবে কথা বলতেন আমরা সাধারণ জনগণ হয়ে তা শুনতাম। এখন সংসদ সদস্য হয়ে সংসদেই কথা বলব। এর চেয়ে ভালো লাগা আর কিছুই হতে পারে না।

খুলনা-৬ (কয়রা-পাইপগাছা) আসনের নৌকার এমপি মো. রশিদুজ্জামান মোড়ল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রতিক্রিয়া কি? জানতে চাইলে বলেন- মানুষের কাছে যে সব ওয়াদা করেছি, মানুষের যে সমস্যাগুলো স্বচক্ষে দেখেছি, সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়; সংসদে তুলে ধরার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করব। নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও আলাদা কোনো ফিলিংক্স বা অনুভূতি কাজ করছে না। কারণ আমার এলাকায় মানুষের দুর্দশা অনেক বেশি। এখন একটাই চিন্তা, কোন কাজটি আগে এবং কোনটি পরে করব; সেদিকেই বেশি নজর এখন। এরপরও বলতে হয়, প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতির। তিনিই ভাষণ দেবেন; ওনার ভাষণই আমরা সবাই শুনব। এ দিনটি আমাদের না। পরবর্তী কার্যদিবস থেকে এমপিদের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হবে। সচেষ্ট থাকব এলাকার মানুষের কথাগুলো আমার ভয়েসের মাধ্যমে সংসদে তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হব এমন স্বপ্ন কখনো লালন করেননি বলে জানান যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনের এমপি এনামুল হক বাবুল। প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম মানুষের সেবা করার জন্য। সংসদ সদস্য পদটি পেয়েছি এটা জীবনের একটা অতিরিক্ত প্রাপ্তি। স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা কি প্রথমে সংসদ সদস্য হয়েই সেগুলো নিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। সেগুলো অর্জন ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সংসদ অন্যতম মাধ্যম। সে মাধ্যমকে অবশ্যই সর্বাত্মক ব্যবহার করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নিবেদিত হয়ে কাজ করব।

সংসদের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে এ এমপি বলেন, প্রথম অধিবেশনে যোগ দেব, ভালোতো লাগবেই। দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নের জায়গা হচ্ছে সংসদ। এখানে যাওয়ার সবাই সুযোগ পায় না। এরপরও নতুন সংসদ সদস্য হয়ে প্রথমে সংসদের আইন ও বিধিগুলো জানার চেষ্টা করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close