বদরুল আলম মজুমদার

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বিএনপির

প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এক দফার আন্দোলনে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়েও পেরে উঠছে না বিএনপি। মামলা-হামলায় জর্জরিত দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মী। কারাবন্দির সংখ্যাও প্রায় ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপরও রাজনীতির ময়দানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখছে বিএনপি। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা।

গত বছর ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা কাটিয়ে উঠতে নানা কৌশল গ্রহণ করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সংগঠন শক্তিশালী করে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে চান তারা। এরই ধারাবাহিকতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দেশের মহানগরগুলোয় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আগের দাবিগুলোর কথাও উল্লেখ করেছে বিএনপি। অবশ্য গত শুক্রবারও জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। শনিবার মিছিলে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা।

দলীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলের আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর বলেন, তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরলে হবে না, আমাদের রাজপথে কর্মসূচি পালন করে যেতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার নয়। এ সরকার চীন, ভারত, রাশিয়ার সরকার। প্রধানমন্ত্রী বিদেশিদের সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। দেশের মানুষ যদি সার্টিফিকেট না দেয়, বিদেশি সার্টিফিকেট দিয়ে আপনাকে বৈধ সরকার প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই। পরে তিনি সংসদ বাতিল ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

দুপুর দেড়টায় সরেজমিন দেখা যায়, নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পল্টন মডেল থানা পর্যন্ত রাস্তার দক্ষিণ পাশে সড়কে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী জড়ো হন। এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকার বিভিন্ন থানার পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এসেছেন। এত নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে নয়াপল্টনের এক পাশের সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। বিপরীত পাশের সড়কেও কিছু নেতাকর্মী অবস্থান করেছেন। ওই পাশে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করেছে। শান্তিপূর্ণ যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, এলডিপি কালো পতাকা মিছিল করবে। তারা আগামী ৩০ জানুয়ারি সমাবেশ করবে। তবে এ কর্মসূচিতে নেই গণতন্ত্র মঞ্চ।

এদিকে বিএনপির এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও আশপাশে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কাকরাইল মোড়, নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঢাকায় এই প্রথম কোনো কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া কালো পতাকা মিছিলটি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে একই সড়কের উল্টো পাশ দিয়ে আরামবাগ পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।

২০১৩ সাল থেকে ৩ মেয়াদে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। কোনো মেয়াদেই লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি। উল্টো নানাভাবে কোণঠাসা। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও মুক্তি মেলেনি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন শীর্ষনেতা কারাবন্দি। এ অবস্থায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে কৌশলী বিএনপি। বিগত সময়ের দুর্বলতাগুলো শনাক্ত করে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছেন শীর্ষনেতারা। এ নিয়ে গত কয়েকদিন দুপুর থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে স্কাইপিতে বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি কীভাবে চলবে, তা নির্ধারণ করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নীতিনির্ধারকরা। এ মুহূর্তে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে। একটির জন্য আরেকটি থেমে থাকবে না। ২৮ অক্টোবরের পর যে আন্দোলন হলো- যেখানে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারাগারে গেছেন, সেখানে ভারপ্রাপ্ত কিংবা সক্রিয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে আন্দোলন ও সংগঠন চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপি একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল। কোনো কার্যক্রম থেমে থাকেনি।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, শিগগিরই আমরা এক দফার আন্দোলন আরো কঠোরভাবে জোরদার করব। আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান আছে। বিএনপি আন্দোলনেই আছে, এর মধ্যে যেখানে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা দরকার আমরা তা করব।

ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, বিএনপির ভোট বর্জনের আহ্বানে জনগণ সাড়া দিয়েছে। দেশের মানুষ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মুখিয়ে আছে। তারা কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে তার প্রশানও দেখিয়ে দিয়েছে সরকারকে। এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরাও অনেকটা চাঙা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন যে নির্দশনা দেবেন, আমরা সেটাই কার্যকর করব। সাংগঠনিক শক্তি কিংবা আন্দোলন, আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close