আরমান ভূঁইয়া

  ১৫ মে, ২০২২

নারীকণ্ঠে প্রেমের ফাঁদ অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ

প্রযুক্তির সহায়তায় পুরুষ হয়েও নারী কণ্ঠে প্রবাসীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। চক্রটি গত তিন বছরে প্রবাসীদের ইমো আইডি হ্যাক করে অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

এক ভুক্তভোগী প্রবাসীর করা মামলায় নাটোরের লালপুর থানা এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. সাঈদ হাসান সাগর (২৫), নয়ন আলী ওরফে নিয়ন আহম্মেদ (২৩) এবং সজল আলী (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি স্মার্ট মোবাইল ফোন ও ১৪টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

ডিবি-সাইবার বিভাগ বলছে, চক্রটি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সুন্দরী মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খুলত। এরপর প্রবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপে যৌন উত্তেজনামূলক ছবি পোস্ট করত। প্রেমণ্ডবন্ধুত্ব এবং ভিডিও কলে সেক্স করার প্রস্তাব দিত। এজন্য তারা প্রবাসীদের ইমো নাম্বার জোগাড় করত। ওই ইমোতে পুরুষ কণ্ঠ অ্যাপের মাধ্যমে নারী কণ্ঠে রূপান্তর করে কল দিয়ে প্রেম অথবা সেক্স করার প্রস্তাব দিত চক্রটি। এরপর ওই প্রবাসীর মোবাইল নাম্বার দিয়ে লগইন করে প্রবাসীর মোবাইলে একটি ওটিপি নাম্বার পাঠাত। পরে প্রবাসীর কাছে কৌশলে ওটিপির নাম্বার নিয়ে ইমো অ্যাকাউন্ট তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। এছাড়াও প্রবাসীদের বিভিন্ন ইমো গ্রুপে যুক্ত করে বিভিন্ন পর্ন ছবি ও ভিডিও পাঠাত। কেউ গ্রুপ থেকে বের হওয়ার পদ্ধতি না জেনে অ্যাডমিনের সহযোগিতা চাইলে, অ্যাডমিন (প্রতারক চক্র) ওই প্রবাসীর ওটিপি নাম্বার চাইত। প্রবাসী ওটিপি নাম্বার দিয়ে দিলে তা দিয়ে প্রতারক চক্র ইমো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত। এভাবে প্রবাসীদের ইমো আইডি চক্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথমে তাদের বিভিন্ন ম্যাসেজের কথোপকথন অনুসন্ধান করে অর্থ লেনদেন, গোপন কথাবার্তা ও অশ্লীল ভিডিও সন্ধান করত। এমন কিছু পেলে সেগুলো দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিত চক্রটি। এছাড়াও ইমো আইডি দিয়ে ওই প্রবাসীর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিপদে পড়ার ভুল বার্তা দিয়ে বিকাশ বা এমএফএসের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত তারা।

এমন কি প্রবাসীদের ইমোতে ভিডিও কল দিয়ে প্রতারকের ক্যামেরা বন্ধ রেখে প্রবাসীর অশ্লীল ভিডিও ধারণ (রেকর্ড) করে রাখত। পরে ওই ভিডিও দিয়ে প্রবাসীদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত। চক্রটি এভাবে গত তিন বছরে কয়েক হাজার প্রবাসীর ইমো আইডি হ্যাক করে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফউল্লাহ বলেন, চক্রটির মূল টার্গেট প্রবাসীদের ইমো আইডি। তরুণীদের ছবি জোগাড় করে ইউটিউব ও ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে সেটা দিয়ে প্রবাসীদের নানা রকম কুণ্ডপ্রস্তাব দিয়ে ইমোতে নিয়ে যেত। কণ্ঠ পরিবর্তনের অ্যাপসের মাধ্যমে নারী কণ্ঠে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করে কৌশলে ইমো আইডি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিত। এরপর নানাভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।

তিনি বলেন, প্রবাসীদের প্রযুক্তি বিশেষ করে যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অনেক বেশি সতর্ক ও জ্ঞান থাকা জরুরি। অপরিচিত কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। ভালোলাগার পোস্ট, ছবি, প্রেম প্রস্তাব ও ভিডিও কলের প্রলোভন থেকে বিরত থাকা জরুরি।

টার্গেট প্রক্রিয়া : সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দরী তরুণীদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি দিয়ে প্রবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপ যুক্ত হয়ে নানা ধরনের পোস্ট দিত। সেখানে ভিডিও কলে সেক্স করার অফার দিত। কেউ কেউ লিখত, সুন্দরী মেয়েদের নম্বর চাইলে যোগাযোগ করুন; একজন ভালো মনের বন্ধু চাই; সুন্দরী গার্ল ফ্রেন্ড চাই;, ইমোতে সেক্স করতে চাইলে ... এই নাম্বারে কল করুন; সেক্স করতে চাইলে যোগাযোগ করুন; হাই প্রবাসী বন্ধুরা, আমার নাম প্রিয়া, আমি টাকার বিনিময়ে সেক্স করতে চাই। এভাবে প্রবাসীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চক্রটি।

পরামর্শ : গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপলিশ কমিশনার (ডিসি) তারেক বিন রশিদ প্রবাসী ইমো অ্যাকাউন্ট এবং যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রবাসীরা পরিবার ও দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ইমো অ্যাপস বেশি ব্যবহার করে থাকে। প্রবাসীদের ইমো অ্যাপস ব্যবহারে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে; বিভিন্ন অ্যাপসের অডিও, ভিডিও কল ও প্রয়োজনীয় সব ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এজন্য প্রবাসে যাওয়ার আগে সরকারি সংস্থা থেকে ট্রেনিং নিতে হবে। ভালগার কথাবার্তা, ইউটিউব ও ফেসবুকের অশ্লীল কন্টেন্ট থেকে বিরত থাকা এবং ফেসবুকে বিভিন্ন তরুণীর ছবি দিয়ে খোলা ফেক আইডি থেকে দূরে থাকতে হবে। এমন কোনো আইডিতে রেসপন্স করা যাবে না; চার বা ছয় ডিজিটের ওটিপি নাম্বার কাউকে দেওয়া যাবে না। অপরিচিত কোনো গ্রুপ বা আইডি থেকে অশ্লীল কন্টেন্ট পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে সেই গ্রুপ থেকে লিভ অপশনে ক্লিক করে বের হয়ে যেতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close