প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

নির্বাচনী সহিংসতায় গুলি ককটেল বিস্ফোরণ

রাজবাড়ী পাংশায় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় হামলায় আহত হয়েছেন তিনজন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একের পর এক ঘটছে নির্বাচনী সহিংসতা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : আসন্ন বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র আলহাজ কামরুল ইসলাম হোসাইনীর প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে আলি মিয়ার দোকান নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এতে উত্তর জলদী ৩নং ওয়ার্ডের মো. শহিদুল ইসলাম, উত্তর জলদি ৫নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ তানভীর ও ৩নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। এ সময় প্রচারের কাজে নিয়োজিত সিএনজি গাড়ি ও মাইক ভাঙচুর করা হয়। পরে তাদের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোসাইনী বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ সরকারদলীয় নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন আমার নির্বাচনী প্রচারে বাধা সৃষ্টিসহ ভাঙচুর চালায়। তারা আমাকে ও আমার লোকজনদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আমার বাড়ির পাশে গিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা গালাগাল করে। আমার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এমনকি তারা একটি ফায়ার ছুড়েও জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ভোটাররা ভোটের দিন যাতে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না পারে, সে পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’

শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) : শৈলকুপায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা-সহিংসতায় দুই ইউনিয়নে এ পর্যন্ত পাঁচজন খুন হয়েছে। আতঙ্কে অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। পুলিশ অবশ্য বলছে, শৈলকুপা হঠাৎ করে সহিংস হয়ে ওঠেনি। এই উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে সামাজিক বিভিন্ন দল রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ইউপি নির্বাচন। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র বলেছে, পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারি উপজেলার ১২টি ইউপিতে ভোট হয়। নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতায় শৈলকুপায় পাঁচজন নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হয়েছেন শতাধিক। নিহত ব্যক্তিদের চারজনই সারুটিয়া ইউনিয়নের। একজন বগুড়া ইউনিয়নের।

শৈলকুপায় এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় খুন হওয়া পাঁচজন হলেন সারুটিয়া ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা অখিল সরকার ও হারান আলী, ভাটবাড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দীন, কৃষ্ণনগর গ্রামের আবদুর রহিম ও বগুড়া ইউনিয়নের কল্লোল হোসেন।

ওই পাঁচজনের মধ্যে সর্বশেষ ৮ জানুয়ারি খুন হন বগুড়া ইউনিয়নের কল্লোল। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে শৈলকুপার হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক তৌফিক হাসান বলেন, ঘটনার দিন কল্লোলসহ কয়েকজন মাঠে পেঁয়াজ খেতে কাজ করছিলেন। এ সময় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামের লোকজন তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।

সারুটিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চারজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জুলফিকার কায়সারের সঙ্গে। নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনিয়নের কাতলাগাড়ি বাজারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন অখিল সরকার ও হারান আলী। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান হারান, ৫ জানুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অখিল।

১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সারুটিয়ার ভাটবাড়িয়া গ্রামে জসিম উদ্দীনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তিনি পেশায় পোশাক শ্রমিক। দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এই সমর্থক নির্বাচন সামনে রেখেই বাড়ি গেছেন মনে করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর ইউনিয়নের কাতলাগাড়ি বাজারে মাহমুদুল হাসানের সমর্থক আবদুর রহিমকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ৮ জানুয়ারি তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এ বিষয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচন বানচাল করতে সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনগণ সেটা হতে দেয়নি।’

তবে বিদ্রোহী প্রার্থী জুলফিকার কায়সার দাবি করেন, ‘ঘটনাগুলোর সঙ্গে তাদের জড়িত করা হচ্ছে। এগুলো এক ধরনের চক্রান্ত।’

পাংশা (রাজবাড়ী) : পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক প্রমাণিকের গ্রামের বাড়ি দুসুনদিয়াতে রাতে অজ্ঞত সন্ত্রাসীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি রাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রাজ্জাকের বাবা সুলতান আলী প্রমাণিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে লাটিসোটা ও অস্ত্রসহ চার থেকে পাঁচ অজ্ঞত সন্ত্রাসী আমার বাড়ির মধ্যে ঢুকে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, নির্বাচনের আগে নাছনা গ্রামের আক্তারের (তোদের আত্মীয়র) বাড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোর ছেলে রাজ্জাকের ইন্দনে মামলা করা হয়েছে। এই মামলা তাড়াতাড়ি তুলে নিতে বলবি তোর ছেলে রাজ্জাককে। এই হুমকির পর পরই চরিটি গুলি এবং দুই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় তারা। তিনি জানান, চার গুলির মধ্যে একটা গুলি ছেলে রাজ্জাক যে কক্ষে থাকে সেই কক্ষের দরোজায় করা হয়। এতে দরোজার উপরের কিছু অংশ ভেঙে যায় ও বাকি ৩টা গুলি উড়ো ফায়ার করে এবং ঘরের বারান্দায় দুটিা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা চলে যায়। তবে গুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যপারে পাংশা থানার ওসি মাসুদার রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, রাতেই ঘটনাস্থল পাংশা থানা পুলিশ পরিদর্শন করেছে এবং অভিযোগের ভিত্তির তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close