প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রত্যাখ্যান করছে সরকার

নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ২০২১ সালে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলো খারিজ করেছে বাংলাদেশ সরকার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’-এ এই কথা বলা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, যারা কোভিড-১৯ মহামারিতে সরকার বা এর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে একটি হতাশাজনক বার্তা দিয়েছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার শাস্তি দেওয়া হবে। তবু সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী এবং অধিকারকর্মীরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব বাধাকে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক মানুষ এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’ ৭৫২ পৃষ্ঠায় প্রায় ১০০টি দেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয় পর্যালোচনা করে।

প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ প্রচলিত অভিজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গ্রেপ্তার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয়, গণতন্ত্রের আহ্বান এখনো শক্তিশালী রয়েছে। এদিকে স্বৈরাচারীরা তাদের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা আরো কঠিন বলে দেখতে পাচ্ছে।

গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যান। গ্রেপ্তারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মোট ছয়বার তার জামিন আবেদন নাকচ হয়।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাস বিচার-পূর্ববর্তী আটকাবস্থার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। ফেসবুকে কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করায় ওই সময় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মে মাসে কোভিড-১৯ মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে, এমনকি সরকারের সমালোচনাকারী প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করেছে।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপজ্জনক আবহাওয়াপ্রবণ পরিস্থিতি রয়েছে এবং পর্যাপ্ত সেবার অভাব রয়েছে সেই ভাসানচর দ্বীপে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কার্যক্রম শুরু করার উদ্দেশ্যে সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে দ্বীপের বসবাসযোগ্যতা, নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে সেখানে প্রায় ২০ হাজার শরণার্থীকে স্থানান্তর করে ফেলেছে। মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থান রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও সংকীর্ণ করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রসঙ্গ আছে। বলা হয়, সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মুহিবুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। আশ্রয় শিবিরের একটি ইসলামিক শিক্ষালয়ে হামলায় সাত শরণার্থীকে হত্যা করা হয়েছিল, যার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। রোহিঙ্গা কর্মীরা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কারণে একদিকে ঝুঁকির মধ্যে থাকে, অপরদিকে সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে ডাকা ক্র্যাকডাউনে নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচার শরণার্থীদের আটক করতে থাকে।

গত বছরের দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা এবং হতাহতের ঘটনাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, পুলিশ যখন বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালায়, তখন চার ব্যক্তি নিহত হন। বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে অন্তত আরো তিনজন মারা গেছেন। শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। প্রসঙ্গটিও আসে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে কর্মীরা সারা দেশে বিক্ষোভ করার এক বছরের বেশি সময় পর এই রায় আসে। কর্তৃপক্ষ এখনো একটি যৌন হয়রানি বিল পাস করতে পারেনি, এ ছাড়া সাক্ষীর সুরক্ষা দিতে বা বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে পারেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close