নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ নভেম্বর, ২০২১

ব্যয় ১০ কোটি টাকা চলল না ১০ বছরও

বিআইডব্লিউটিসির ওয়াটার বাস

জবাবদিহি নেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন-বিআইডব্লিউটিসিতে। প্রায় ১০ কোটি টাকায় কেনা হয় ১২টি ওয়াটার বাস। ১০ বছরও চালানো সম্ভব হয়নি সেগুলো, অচল হয়ে গেছে বেশির ভাগ। এখন অচল-সচল, সবগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সংস্থাটি।

রাজধানীর যানজট কমানো এবং নৌপথে যাত্রীসেবার লক্ষ্যে ২০১০ সালে আগস্ট মাসে প্রথম ১ কোটি সাড়ে ১১ লাখ টাকায় দুটি ওয়াটার বাস ক্রয় করে বিআইডব্লিউটিসি। চালু করা হয় বাদামতলী থেকে গাবতলী রুট। পরে দুই ধাপে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকায় আরো ১০টি ওয়াটার বাস আনা হয়। এরপর চালু করা হয় টঙ্গী টু নারায়ণগঞ্জ রুট। যাত্রী না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে গত দুই বছরে দুটি রুটই বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে এখন বেশির ভাগই অচল পড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়।

সব মিলিয়ে শুধু রাজধানীর সদরঘাট-গাবতলী নৌপথে মোট তিনবার চালু হয় ওয়াটার বাস। প্রথম দুবার সম্পূর্ণ সরকারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তত্ত্বাবধানে চলে। তাদের লোকসানের মুখে তৃতীয়বার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ক্রমাগত লোকসান থেকে রক্ষায় ২০১৭ সালে বিআইডব্লিউটিসি গঠিত সমীক্ষা কমিটি ১২টি পদক্ষেপের সুপারিশ করে। এর মধ্যে ছিল বুড়িগঙ্গার পানি দুর্গন্ধমুক্ত করা, প্রতি ঘাটে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীর উভয় পাড়ে হাঁটার পথ নির্মাণ, বাসে পর্যাপ্ত লাইট-ফ্যান ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো। তবে বাস্তবায়ন হয়নি কোনোটিই।

বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ্ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাত্রীদের সেভাবে সেবা দেওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে এসে যাত্রীর সংখ্যাও কমে যেতে থাকলে বিভিন্ন কারণে আমরা এই সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়ে পড়ি।

যেসব কারণে বন্ধ রুট, শুরু আগে তা যাচাই-বাছাই করা হয়নি? এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ জবাবদিহি না থাকা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ’-এর যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা তারা সেভাবে কাজ করতে পারেনি। সবকিছু ভালোমতো পর্যবেক্ষণ না করেই এই ওয়াটার বাস নামানো হয়।

বেসরকারি খাতে ভাড়া দিয়ে বুড়িগঙ্গায় যাত্রী পারাপারে ব্যবহার হচ্ছে চারটি ওয়াটার বাস। সেটিও অদ্ভুত কায়দায়। ওয়াটার বাসপ্রতি মাসে সংস্থাটি ভাড়া পায় মাত্র ৫ হাজার টাকা করে। অথচ মেরামত খরচ এবং বাসপ্রতি চারজন করে কর্মচারীর বেতন টানতে হয় বিআইডব্লিউটিসিকেই। লস গুনতে গুনতে এখন ওয়াটার বাসগুলো বিক্রি করার চিন্তাভাবনা করছে সংস্থাটি।

বিআইডব্লিউটিসির নথিপত্র থেকে জানা যায়, তিন দফায় উৎপাদিত ১২টি ওয়াটার বাসের উৎপাদনে খরচ হয়েছে মোট ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, সদরঘাট-গাবতলী নৌপথে আয় হয় ৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এই সময় শুধু জ্বালানি খরচই ছিল ৪১ লাখ টাকা। এর বাইরেও রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ও কর্মীদের বেতন-ভাতা।

তবে শেষ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি খরচ, বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার নির্দিষ্ট পরিমাণ জানা যায়নি।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ বুড়িগঙ্গা নৌকা মাঝি শ্রমিক শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মনির হোসেন বলেন, ‘এটা মানবসেবার মতো। ঠিকমতো চালাতে পারছি না। তেল খরচ বেশি, দুই ইঞ্জিন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close