চট্টগ্রাম ব্যুরো ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ০৭ আগস্ট, ২০২০

সিনহা হত্যাকাণ্ড

ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার মামলায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দলাল রক্ষিতসহ বাকি ৪ জনকেও সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কক্সবাজার জেলা জজ আদালত। এর আগে ৭ আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ৭ আসামির আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন এই আদেশ দেন।

প্রদীপকে নিয়ে পুলিশ চট্টগ্রামে থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে কক্সবাজারের বিচারিক হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। তার আগেই বিকাল পৌনে ৪টার দিকে পরিদর্শক লিয়াকতসহ বাকি ছয়জনকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।

আসামি পুলিশ সদস্যদের আদালতে হাজির করার আগে পুরো এলাকায় নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ওই নিরাপত্তার মধ্যেও আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে আসামিদের হস্তান্তর করা হবে র‌্যাবের হাতে। র‌্যাবকেই এ মামলার তদন্তভার দিয়েছেন আদালত।

টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় তার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস যে হত্যা মামলা করেছেন, তাতে লিয়াকতকে ১ নম্বর এবং প্রদীপকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।

শারমিন বুধবার সকালে টেকনাফের বিচারিক হাকিম আদালতে মোট ৯ জনকে আসামি করে ওই মামলা করার পর বিকালে টেকনাফ থানা থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যাহার করা হয়। পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয় দুই দিন আগেই। মামলার আসামিরা হলেন ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত ছাড়া মামলায় এসআই নন্দলাল রক্ষিত, এসআই টুটুল, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও কনস্টেবল মো. মোস্তফাকে আসামি করা হয়েছে।

এ মামলায় সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গী ও ৩১ জুলাইয়ের ঘটনায় টেকনাফ পুলিশের করা মামলার আসামি সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

ওসি প্রদীপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলার পর তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসর্মপণ করতে যান। সেখানে আইনজীবীরা বলেছেন, এখানে তা করা যাবে না কক্সবাজারেই আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেই হিসেবে প্রদীপ দুপুরের দিকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে এসে আমাদের কাছে সহযোগিতা চান। আমরা একজন আইন মান্যকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তাকে সহযোগিতা করছি। তার নিরাপত্তার খাতিরে সিএমপির পক্ষ থেকে পুলিশ স্কট দিয়ে তাকে কক্সবাজার আদালতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ টেকনাফ থানার ওসি (প্রত্যাহার) প্রদীপ কুমার দাস গত ৪ আগস্ট থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে নিরুদ্দেশ ছিলেন। অন্য ৮ আসামি পুলিশ লাইনেই নিরাপত্তা হেফাজতে ছিলেন।

এর আগে একই ঘটনায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ৯ পুলিশ সদস্যসহ ১৭ জনকে প্রত্যাহার করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ খান।

দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সিনহা মো. রাশেদ খান ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। আরো তিন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি উঠেছিলেন নীলিমা রিসোর্টে।

সিনহা নিহতের ঘটনায় জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের সমিতি রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)।

একই দিন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে গিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, এই ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে বা যারা চিহ্নিত হবে, তারাই শাস্তি পাবে। এর দায় বাহিনীর ওপর পড়বে না।

ওসি প্রদীপের বাড়ি চট্টগ্রামে। কক্সবাজারের আগে তিনি চট্টগ্রামের কর্মরত ছিলেন। ওই সময় জায়গা দখলসহ নানা অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।

পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ মডেল থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন ২০১৮ সালে। তিনি উপপরিদর্শক পদে ১৯৯৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। প্রদীপ কুমার দাশ ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পান। এর আগে একাধিকবার রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close