আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের বিচার দাবি

গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিন : হেগ আদালতে গাম্বিয়া

গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে বলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দাবি উত্থাপন করেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গতকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজেতে শুরু হওয়া শুনানিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে গাম্বিয়া। মিয়ানমার রাষ্ট্রীয়ভাবে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে বলেও দেশটি জানায়।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার দায়ে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের শুনানি গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে চলে ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে চলা এই শুনানিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘটিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের চিত্র তুলে ধরেন মামলার বাদী গাম্বিয়ার আইনজীবীরা। এ সময় প্রজেক্টরে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের চালানো নৃশংসতার সচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

গাম্বিয়ার আইনজীবীরা বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছিল। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করেছিল। মা-বোন ছাড়াও শিশুদের হত্যা করা হয়েছিল। সেনাবাহিনী প্রথমে বিদ্রোহীদের দমন করার কথা বললেও তারা মূলত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। নারীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে ‘মিয়ানমার তোদের দেশ নয়’। এসব কথা যারা হত্যার হাত থেকে বেঁচে গেছে, তাদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি। নাগরিক অধিকার থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সরকারিভাবে রোহিঙ্গাদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে। খবর রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরার।

গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে দায়েরকৃত মামলার শুনানির শুরুতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বোধ হত্যাকান্ড বন্ধে দেশটির প্রতি আহ্বান জানান গাম্বিয়ার আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামাবাদু। মামলার শুনানির শুরুতে আইসিজের প্রধান বিচারপতি আবদুল কাই আহমেদ ইউসুফের উদ্দেশে তিনি বলেন, গাম্বিয়া যা বলছে তা হলো আপনি মিয়ানমারকে এই নির্বোধ হত্যাকান্ড বন্ধ করতে বলুন।

হেগে রোহিঙ্গা গণহত্যার এ বিচার প্রক্রিয়ায় দেশের হয়ে আইনি লড়াই চালাতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী তাফাদজ পাসিপান্দো বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের কথা অস্বীকার করতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি কৌশল অবলম্বন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ফেক র‌্যাপ’ নামে একটি পেজ খোলা হয়। এ পেজের নিয়ন্ত্রণ করছে স্টেট কাউন্সিলরের দফতর।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নারীদের দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সু চি বলেছেন, সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর কেউ নোংরা বাঙালি মেয়েদের স্পর্শ করবে না। কারণ তারা আকর্ষণীয় নয়। তার আগে মামলার শুনানির শুরুতে গাম্বিয়ার আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামাবাদু বলেন, বর্বর এবং নৃশংস এসব কাজ; যা আমাদের সবার বিবেককে আঘাত করেছে। এটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারকে নিজ দেশের মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে।

দ্য হেগের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রোহিঙ্গা এবং মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। গতকাল আদালতে গাম্বিয়ার বক্তব্য উপস্থাপনের পর আজ বুধবার মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরবে। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া এবং বিকালে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খন্ডন ও চূড়ান্ত বক্তব্য পেশের সুযোগ পাবে। গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেদেশের আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।

আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত গণহত্যার এই মামলার চূড়ান্ত রায় দিতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের যাতে আর কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেজন্য জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা চায় গাম্বিয়া।

দেশটির আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক এই আদালতে রাখাইনে দলবদ্ধ ধর্ষণ, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানো, শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম শিশুকে ছুরিকাঘাতে হত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো গণহত্যার আলামত। আদালত কক্ষে গাম্বিয়ার আইনজীবী দলের সদস্যরা যখন মিয়ানমারের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেন, তখন নির্বিকার দেখা যায় অং সান সু চিকে। এ সময় আদালতের বাইরে কয়েক ডজন রোহিঙ্গা ন্যায়বিচারের দাবিতে সমাবেশ করেন।

একই সময় মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত ইয়াঙ্গুনে সু চির সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করে। সমাবেশে আসা বার্মিজদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। অনেকেই ‘দেশের মর্যাদা রক্ষায়’, ‘জননী সু চির পাশে দাঁড়ান’ স্লোগান দেন।

রাখাইনের মিন গি গ্রামে নৃশংস এক হত্যাকান্ডের চিত্র তুলে ধরে গাম্বিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য অ্যান্ড্রু লোয়েনস্টেইন জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারীদের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে ওই একটি গ্রামেই প্রায় ৭৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। হত্যাকান্ডের শিকার এসব রোহিঙ্গার মধ্যে ১০০ জনের বেশি শিশু; যাদের বয়স ৬ বছরের নিচে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের কাছে দেওয়া এক রোহিঙ্গার জবানবন্দি হুবহু তুলে ধরেন আইনজীবী অ্যান্ড্রু লোয়েনস্টেইন। তিনি বলেন, ‘আমি চার প্রতিবেশীসহ বাড়িতে প্রবেশ করেছিলাম। আমাদের তিনজনের শিশুসন্তান ছিল। বাড়িতে ঢুকে উঠানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি, আমাদের গ্রামের ছোট ছোট ছেলেদের মরদেহ। এক দিন বাড়িতে প্রবেশ করার পরপরই সৈন্যরা দরজা বন্ধ করে দেয়। এক সৈন্য আমাকে ধর্ষণ করে। সে আমার পেছনে, গলায় এবং তলপেটে ছুরিকাঘাত করে। আমার বাচ্চাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম; ওর বয়স ছিল মাত্র ২৮ দিন। কিন্তু তারা তাকে জানালা দিয়ে মাটিতে ছুড়ে মারে এবং সঙ্গে সঙ্গেই সে মারা যায়।’

হেগের আদালতে এ মামলার শুনানি চলবে আগামীকাল পর্যন্ত। মামলায় গণহত্যার দায় অস্বীকারের পক্ষে সাফাই গাইতে লড়ছেন অং সান সু চি। আজ বুধবার স্থানীয় সময় ১১টায় হেগে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গাইবেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় এই উপদেষ্টা।

এর আগে শুনানির শুরুতে এ মামলার প্রধান বিচারপতি আবদুল কাই আহমেদ ইউসুফ অভিযোগ পড়ে শোনান। সোমালীয় বংশোদ্ভূত এই বিচারপতি পরে গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের পক্ষে একজন করে অ্যাডহক বিচারক নিয়োগ দেন। দুই অ্যাডহক বিচারপতি গাম্বিয়ার নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস। তারা মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার শুরুতে শপথ নেন।

আইসিজের রেজিস্ট্রার ফিলিপ গোতিয়ে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গাম্বিয়ার করা এক আবেদনের বিস্তারিত পড়ে শোনান। পরে অধ্যাপক পায়াম আখাভান রাখাইনে গণহত্যার বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার জাতিসংঘের গণহত্যা সনদের ৭০তম বার্ষিকী। কিন্তু এই সনদের শর্ত অনুযায়ী গণহত্যা বন্ধ করেনি মিয়ানমার।

যেভাবে আইসিজেতে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করে গাম্বিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক এ আদালতে গণহত্যার দায়ে তৃতীয় মামলা এটি।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয়, বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য দেশগুলো বিচারের মুখোমুখি হতে বাধ্য। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন মামলা হয়েছিল সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে। এ মামলায় সার্বিয়া বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিল বলে প্রমাণ হয়।

কানাডা, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, তুরস্ক এবং ফ্রান্স জোর দিয়ে বলেছে যে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে। ইসলামী দেশসমূহের সংগঠন ওআইসি তার ৫৭টি সদস্য দেশকে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলার কাজে সহায়তা করে।

যেভাবে মামলার তদন্ত

গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ৪ জুলাই রোহিঙ্গাদের ওপর যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসির অনুমতি চান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা। জুলাই মাসে তার তদন্ত দল বাংলাদেশে এসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করে।

এরপর প্রাথমিক তদন্ত শেষে পূর্ণ তদন্তের জন্য আবেদন করেন ফাতো বেনসুদা, যাতে সায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা। ফলে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিপীড়নের ঘটনায় কোনো আন্তর্জাতিক আদালতে তদন্ত শুরু হয়। তবে শুরুর দিকে অনেকে এ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ মিয়ানমার আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয়। একইভাবে আইসিসির প্রতিনিধিদলকেও রাখাইনে পরিদর্শনে যাওয়ার অনুমতিও দেয়নি।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর জ্বালাও-পোড়াও, খুন, ধর্ষণের মুখে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এই অভিযান গণহত্যার অভিপ্রায়ে পরিচালনা করেছে বলে মন্তব্য করেছে।

আদালতে নির্বাক সু চি

রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানির শুরু হয়েছে। আদালতে গাম্বিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। অন্যদিকে, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি। এদিন আদালত কক্ষে গাম্বিয়ার আইনজীবী দলের সদস্যরা যখন মিয়ানমারের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরছিলেন, তখন নির্বিকার দেখা যায় অং সান সু চিকে। এ সময় আদালতের বাইরে কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে ন্যায়বিচারের দাবিতে সমাবেশ করতে দেখা যায়।

আবার মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত ইয়াঙ্গুনে সু চির সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করে। সমাবেশে আসা বার্মিজদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। অনেকেই ‘দেশের মর্যাদা রক্ষায়’, ‘জননী সু চির পাশে দাঁড়ান’ স্লোগান দেন।

রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের কথা অস্বীকার করতে বলেছিলেন সু চি।

রাখাইনে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বর্বরতার তথ্য-উপাত্ত ও দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির ভূমিকা হেগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) তুলে ধরেছেন গাম্বিয়ার পক্ষের মার্কিন আইনজীবী তাফাদজ পাসিপান্দো। আদালতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের কথা অস্বীকার করতে বলেছিলেন অং সান সু চি। ফেসবুকে ‘ফেক র‌্যাপ’ নামে যে পেজ খোলা হয়েছে, সেটিও নিয়ন্ত্রণও হচ্ছে স্টেট কাউন্সিলরের দফতর থেকে।

তাফাদজ পাসিপান্দো আরাকানে এখনো যে ৬ লাখ রোহিঙ্গা আছেন, তাদের দুর্ভোগ ও ঝুঁকির কথা আদালতে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাখাইনে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা শিবিরে রোহিঙ্গাদের আটক রাখা হয়েছে। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। নানা বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে। জাতিসংঘ তদন্তে এসব উঠে এসেছে বলে জানান পাসিপান্দো। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের চাষাবাদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, খাদ্য সরবরাহ কমানো হয়েছে, বাড়ির গবাদিপশু কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের অভুক্ত রাখতেই এসব করা হয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়গুলো ওঠে এসেছে। পাসিপান্দো বলেন, রাখাইনে গণহত্যার অপরাধ যাতে আর না ঘটে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে পারে আইসিজে।

মিয়ানমারের নেতৃত্বে থাকছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। শুনানির শুরুতে আইসিজের প্রেসিডেন্ট আবদুল কাই আহমেদ ইউসুফ শুনানির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিচার কক্ষে উপস্থিত সুধীজনদের অবহিত করেন।

বাংলাদেশ এই মামলার সরাসরি অংশগ্রহণকারী পক্ষ না হলেও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধিদল ওই শুনানিতে উপস্থিত রয়েছেন। মামলার শুনানি উপলক্ষে হেগ শহরে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার ছাড়াও অন্য কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছেন। মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন দিতে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কূটনীতিকরাও উপস্থিত হয়েছেন। এ ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী এবং মিয়ানমার সরকারের সমর্থকরাও উপস্থিত রয়েছেন।

আইসিজের বিচারক যারা

আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন সোমালিয়ার বিচারপতি আবদুল কাই আহমেদ ইউসুফ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনের বিচারপতি ঝু হানকিন। বিচারকদের নির্বাচন করেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ। অন্য সদস্যরা হলেন সেøাভাকিয়ার বিচারপতি পিটার টমকা, ফ্রান্সের বিচারপতি রনি আব্রাহাম, মরক্কোর মোহাম্মদ বেনুনা, ব্রাজিলের আন্তোনিও আগুস্তো কানকাদো ত্রিনাদে, যুক্তরাষ্ট্রের জোয়ান ই ডনোহু, ইতালির গর্জিও গাজা, উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্দে, ভারতের দলভির ভান্ডারি, জ্যামাইকার প্যাট্রিক লিপটন রবিনসন, অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড ক্রর্ফোড, রাশিয়ার কিরিল গিভরগিয়ান, লেবাননের নওয়াফ সালাম এবং জাপানের ইউজি ইওয়াসাওয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close