নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাজধানীতে বিষমুক্ত শাকসবজির বাজার

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সার ও কীটনাশকমুক্ত শাকসবজি ও দানাদার শস্যের জোগান দিতে রাজধানীতে যাত্রা করেছে ‘কৃষকের বাজার’। গতকাল শুক্রবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবন প্রাঙ্গণে এ বাজারের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। এখন থেকে প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুই দিন সকাল ৭টা থেকে বসবে এ বাজার।

বাজার উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানকার এই কৃষকের বাজারে যে কৃষকরা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের আমরা এক বছর ধরে প্রস্তুত করেছি। সম্পূর্ণরূপে কীটনাশকমুক্ত সবজি এখানে নিয়ে আসছেন তারা। স্বল্প পরিসরে হলেও এটি অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে এটি বৃহৎ পরিসরে করার উদ্যোগ আমরা নেব।’ কৃষি খাতে বাংলাদেশের আরো সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘দানাজাতীয় খাদ্যের ক্ষেত্রে আমরা এখন উদ্বৃত্ত অবস্থায় আছি। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের শাকসবজি, খাদ্য ও কৃষিপণ্য বিদেশে রফতানি হয়েছে। এটি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত অর্থবছরে কৃষিক্ষেত্রে রফতানির অগ্রগতি হয়েছে ৩৪ ভাগ। অন্য সব সেক্টরের চেয়ে কৃষি সেক্টরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।’

ঢাকার আশপাশের মোট আটটি উপজেলা থেকে অর্গানিক বিভিন্ন সবজি নিয়ে এ বাজারে অংশগ্রহণ করেছেন কৃষকরা। প্রথমবার তাদের পরিবহন খরচ সরকার বহন করে। পরবর্তীতে কৃষকরা নিজ উদ্যোগেই এখানে সবজি নিয়ে আসবেন।

এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন ক্রেতারা। কীটনাশকমুক্ত সবজির নিশ্চয়তা পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বেসরকারি চাকরিজীবী সৈয়দ আতিকুল ইসলাম জানান, প্রথমত. ভালো লাগছে যে, এখানে সরাসরি কৃষকরা দাম পাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত. শাকসবজিগুলো সম্পূর্ণ কীটনাশকমুক্ত। তাই একসঙ্গে অনেক কিনে নিচ্ছি। তবে এ বাজারে বিভিন্ন পণ্যে দামের আধিক্য রয়েছে বলেও অভিযোগ কোনো কোনো ক্রেতার।

এ ব্যাপারে রাজধানীর খামারবাড়ির বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী হাসিবুল ইসলাম বলেন, বাইরের বাজার থেকে এখানে প্রতিটি পণ্যে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেশি। যেহেতু পরিবহন খরচ নেই, সেহেতু কৃষক আরো কম দামে এগুলো বিক্রি করতে পারেন। এ বিষয়টি আয়োজকদের লক্ষ রাখা উচিত ছিল। এদিকে এ ধরনের অভিযোগের উত্তরে সাভারের ধামরাই থেকে আগত কৃষক সিরাজুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘বাজারে ফুলকপি পাওয়া যায়, আমাদের এখানেও ফুলকপি আছে। কিন্তু এই দুই ফুলকপির মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমরা সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে চাষ করি। এ ধরনের ফসলের বীজ সব জায়গায় পাওয়া যায় না। নির্ধারিত কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া যায়, যার দাম সাধারণত বেশি। তাছাড়া আমরা কোনোরূপ কীটনাশক ব্যবহার করি না। দৈনন্দিন আবর্জনা থেকে তৈরি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করি। এ ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণসহ ফসলকে পোকামাকড়মুক্ত রাখতে অনেক শ্রমও খরচ হয়। তাই আমাদের দামটা একটু বেশি। যেমন একটি ফুলকপির পেছনে খরচ হয় ২০-৩০ টাকা। আমরা সেটা বিক্রি করছি ৪০ টাকায়।’ বিক্রিবাট্টা কেমন হচ্ছেÑ জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ থেকে আগত কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিক্রি ভালো হয়েছে; যা সবজি নিয়ে এসেছিলাম তার সবই বিক্রি হয়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি সব বিক্রি হয়ে যাবে ভাবিনি। প্রতি শুক্র ও শনিবার এ বাজার চলবে, আমরাও নিয়মিত এখানে সবজি নিয়ে আসব।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ, বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট ড. সিমপন প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close