নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৯

আদালতের রায়ের পরও মিলছে না ক্ষতিপূরণ

রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আহত ও নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় পেয়েও মিলছে না ক্ষতিপূরণের টাকা। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা দেশের প্রথম মামলাটি হয়েছিল ২৯ বছর আগে। ২৬ বছর লেগেছে রায় হতে। রায়ের তিন বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণের সেই টাকা।

সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মন্টু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯৮৯ সালে। তার স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক রওশন আরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন ১৯৯১ সালে। ২০১৪ সালে মন্টুর পরিবারকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিচার আদালতের রায় বহাল রেখে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু এখনো রওশন আরা পাননি ক্ষতিপূরণের টাকা।

আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটি মামলা করেন রওশন আরা। আদালত বিবাদী পক্ষের তেজগাঁওয়ের পাঁচ বিঘা জমি নিলামে বিক্রির নির্দেশ দেয়। কয়েক দফা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিলাম ডাকা হলেও মিলছে না কোনো ক্রেতা। রওশন আরা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি বিবাদী পক্ষকে আদেশ দেন বা অনুরোধ করেন আমার টাকাটা দিয়ে দেয়ার জন্য তাহলে আমি ঋণমুক্ত হতে পারি।’ তার প্রশ্নÑ ‘মৃত্যুর আগে কি আমি ক্ষতিপূরণের টাকাটা পাব না?’ এদিকে, গত বছরের ৩ এপ্রিল বিআরটিসির বাস ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে হাত হারান সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ দিন পর ১৭ এপ্রিল মারা যান তিনি। রাজীবের ঘটনায় হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন একজন আইনজীবী।

জানা যায়, বাবা-মা হারানো রাজীবের দুজন স্কুলপড়ুয়া ভাই রয়েছে। তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। রাজিব ছিল সংসারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন। গত এক বছরে রাজিবের নামে ছয়টি সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রবেশপত্র আসে খালার বাসার ঠিকানায়।

নিহত রাজিবের খালা জাহানারা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই ক্ষতিপূরণটা যদি ওরা পেত, আর বিচারটা যদি হতো আমাদের আত্মা শান্তি পেত।’ রাজিবকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের রুলের ওপর শুনানি হবে আগামী ১০ এপ্রিল।

গত ১৯ মার্চ রাজধানীর কুড়িল এলাকায় সুপ্রভাত নামের একটি বাসের চাপায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। হাইকোর্ট থেকে আবরারের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও টাকা না দিয়ে বাসের মালিক আপিল করেছেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের পরিবারকে ২০১৭ সালে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গাড়ির চালক ও মালিকের আপিল আবদনে মামলা এখনো বিচারধীন।

এদিকে, গ্রীন লাইন বাসের চাপায় পা হারানো রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ১০ এপ্রিল সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। টাকা না দিলে বাস জব্দ করে নিলামে তোলার হুশিয়ারি দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু মালিকরা একাট্টা হয়েছেন ক্ষতিপূরণের টাকা না দেয়ার ব্যাপারে।

তবে সড়ক দুর্ঘটনায় বিমানবন্দর সড়কে নিহত দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও মিমের পরিবারকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৫ লাখ করে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close