তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

চট্টগ্রাম নগরীতে ‘স্টিকার বাণিজ্য’

ঘুষের টাকায় ‘হালাল’ সব অনিয়ম

নগরীর বাকলিয়া ও কোতোয়ালি থানার অলিগলির চার রুটে অবৈধভাবে চলছে পাঁচ শতাধিক অটোরিকশা। একতা স্টিকার নাম দিয়ে একটি সিন্ডিকেট পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব অটোরিকশা রাস্তায় নামিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ ধরনের রিকশার চালোনোর রোড পেতে এক হাজার এবং রাস্তায় যাত্রী পরিবহনের জন্য মাসে আরো দিতে হয় এক হাজার টাকা। এই টাকা লেনদেনের আরেক নাম ঘুষ-বাণিজ্য। এই টাকা যায় পুলিশ ও স্থানীয় দালালদের পকেটে। তবে পুলিশ এই ঘুষের কথা অস্বীকার করেছে। তবে স্থানীয়রা বলেছেন ঘুষের টাকায় ‘হালাল’ হচ্ছে এই স্টিকার বাণিজ্যসহ অন্য অনিয়মগুলো। নগরীর কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানাধীন আন্দকিল্লা জেমিসন রেডক্রিসেনট হসপিটাল থেকে তুলাতলী, কালামিয়া বাজার থেকে মিয়াখান নগর, রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে চকবাজারের ফুলতলা ও দিদার মার্কেট থেকে শুরু করে বউবাজার হয়ে জামাই বাজার রোডে এসব ব্যাটারি রিকশা অবাধে চলাচল করছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব রিকশা চললেও তা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব অটোরিকশায় বেশিরভাগেরই ক্ষেত্রে ‘একতা’ নামে স্টিকার ব্যবহার করছে। অভিযোগ উঠেছে, বাকলিয়া ও কোতোয়ালি থানাকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে এসব গাড়ি সড়কে নামিয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমি জানিনা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অন্যদিকে বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, আমি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। যদি এ খবর সঠিক হয় তাদের রিকশাগুলো জব্দ করা হবে এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায় মামুন, টিপু কোম্পানি, নেজাম উদ্দিন ফাহিম, শফিক কোম্পানি, নাজিম, সোহেল, আবুল কালাম, রুহুল আমিন কোম্পানি এই অটোরিকশা চলাচলের বিষয়টা দেখভাল করেন। তাদের নির্দিষ্ট কিছু গ্যারেজ রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে এসব গ্যারেজের বেশিরভাগেরই বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাপ্পির গ্যারেজ ও আবুল কালামের গ্যারেজে বর্তমানে এসব রিকশার চার্জ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এসব লাইন দিয়েছেন।

‘নাজিম ও সোহেল নামে দুই ব্যক্তি কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানা পুলিশ ও বিদ্যুৎয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অটোরিকশার চলাচলে বৈধতা নিচ্ছে। এজন্য প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকাও দিতে হচ্ছে ওইসব জায়গায়।’ এ অভিযোগ স্থানীয়দের।

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে এই সিনডিকেটের সদস্য মামুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাইনে ঢুকতে হলে অগ্রিম এক হাজার টাকা এবং মাস শেষে আরো এক হাজার। তারপর আপনাকে একতা নামে একটি স্টিকার দেওয়া হবে। এই স্টিকার লাগানো থাকলে কেউ আপনাকে ধরবে না। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘আপনার গাড়ি থাকলে একটু কম নেব। তিনি আরো বলেন, লেখালেখি করে কী হবে। আমরা সবকিছুু ম্যানেজ করেই স্টিকার দিয়ে এই রোড চালাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে নগরীতে চলাচল করে থাকে প্যাডেলচালিত রিকশা বা সাধারণ রিকশা। কিন্তু ব্যাটারিচালিত হওয়ায় এসব রিকশার চলাচলের বিষয়ে লাইসেন্স দেওয়ার কোনো ক্ষমতা সিটি করপোরেশনের নেই। অন্যদিকে সড়কে চলাচলরত যান্ত্রিক যানবাহনগুলো নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষমতা বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কাছে থাকলে অটোরিকশার নিবন্ধনের ব্যাপারে তাদের কোনো ক্ষমতা নেই।

বিদ্যুৎ অপচয়, অনিয়ন্ত্রিত গতি, পরিবেশ দূষণসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময় অটোরিকশা আলোচনায় আসে। সম্প্রতি আদালতের এক আদেশে অটোরিকশার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর কয়েক দফা অভিযানে একটি সময় বন্ধ থাকে অটোরিকশা। ফলে বিভিন্ন সময় রাস্তায় নামতে তৎপর থাকে অটোরিকশার সিন্ডিকেটটি। বর্তমানে মূল সড়কে চলাচল করতে না পারলেও অলিগলির সড়কগুলোতে এসব রিকশা দেদারসে চলছে। পুলিশসহ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় এসব অটোরিকশা চলাচল করছে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। বাকলিয়া ও কোতোয়ালি এলাকার একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘এসব অটোরিকশা চলছে যেখানে দরকার, সেখানে ঘুষের টাকা দিয়ে। ঘুষের টাকায় তো এখন সব অনিয়মই ‘হালাল’ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) হারুন-উর-রশীদ-হাযারী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্বল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে নগরীর যানজটই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওইসব অটোরিকশা চলাচল করে থাকে। নগরীতে অটোরিকশা চলচল অবৈধ। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close