নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯

গার্মেন্টে বিক্ষোভ

উসকানিদাতাদের পুলিশ খুঁজছে

সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে আবারও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পোশাকশ্রমিকরা। দফায় দফায় পোশাক শ্রমিকদের এই বিক্ষোভকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারা বলছেন, দেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করতে বারবার বিক্ষোভের নামে সহিংস আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন শ্রমিকরা। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল পোশাকশ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে কিনা তা খুঁজতে মাঠে নেমেছেন র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনের শুরুর দিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে যে ৯টি গার্মেন্ট ভাঙচুর করা হয়েছিল। ভাঙচুরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে অন্য কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলে সহিংসতা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এদিকে, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণের পর টানা সাত দিন আন্দোলন শেষে গতকাল সোমবার সকালে কাজে যোগ দিলেও সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ১০ কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে নেমে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেছে। সকালে আশুলিয়ায় প্রায় ১০ কারখানায় প্রবেশের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের সাত দিনের হাজিরা দিতে না চাইলে শ্রমিকরা কারখানা থেকে পুনরায় বেরিয়ে যান।

বাইপাইল এলাকার ফাউনটেন কারখানার জিএম মাসুদ রানা শ্রমিকদের জানান, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তারা বেতন দেবেন। তবে যে ক’দিন শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রেখে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন, সে ক’দিনের বেতন তারা দেবেন না। এ সময় শ্রমিকরা জিএম মাসুদের কথায় রাজি না হয়ে কাজে যোগ দেননি। ফলে কারখানার শ্রমিকরা আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। পরে টাঙ্গাইল জেলার এসপি মাসুদ রানার নেতৃত্বে এক দল পুলিশ তাদের কর্মস্থলে যেতে অনুরোধ জানালে তারা চলে যান।

বেলা ৯টার দিকে আশুলিয়ায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ইউনিক, জামগড়া, বেরন ও নরসিংহপুর এলাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক একই ঘটনায় কারখানার ভেতরে প্রবেশ করার পর কাজ না করে বেরিয়ে যান।

এ ছাড়া জামগড়ার পলমল, হামীম, শারমিন গ্রুপ ও উইনডিসহ বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদানের পর আবারও বেরিয়ে যান। এসব শ্রমিক জামগড়া ছয়তলা এলাকায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

তবে তুরাগ এলাকার পোশাক কারখানাগুলো শান্ত ছিল। কয়েকটি কারখানা বন্ধ। সকাল ৯টায় একেএইচ পোশাক কারখানার এক শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এমন গুজবের কারণে ওই কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। পরে যখন তারা জানতে পারেন যে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত হননি, আহতের ঘটনা ঘটেছে, তখন আন্দোলনকারীরা ফিরে যান।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান জানান, সকালে আশুলিয়ায় অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দেন। সকাল ৯টার দিকে জামগড়া, নরসিংহপুর ও বেরন এলাকায় হামীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, এনভয় ও উইনডিসহ প্রায় ১০ কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এসব কারখানার কর্তৃপক্ষ একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন।

আজ মঙ্গলবার থেকে সাভার ও আশুলিয়ার সব কারখানার শ্রমিকরা তাদের কাজে যোগ দেবেন বলে আশাবাদী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

এ ঘটনা স্বাভাবিক চোখে দেখছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। র?্যাব মনে করছে, স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ চরিতার্থ করতে, শ্রমিকরা এমন সহিংস কার্যক্রম চালাতে পারেন।

অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন ঘিরে নির্বাচনের আগে থেকেই পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে। পরিস্থিতিও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেই আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে ওপরে কঠোর নজরদারি রাখছে। পাশাপাশি শ্রমিকরা যেন ধ্বংসাত্মক, সহিংসতামূলক কার্যক্রম না চালাতে পারে। সেজন্য নেতৃত্বদানকারী শ্রমিকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

বিক্ষোভের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও কোথাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর টহল রাখা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাঠে নামানো হয়েছিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।

পোশাক শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ আন্দোলনের সার্বিক বিষয়ে র?্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘একটি গোষ্ঠীর উসকানিতে তারা (শ্রমিকরা) ভাঙচুর চালিয়েছেন। শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীরা সাধারণ শ্রমিকদের ব্যবহার করে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। র?্যাব নেপথ্যে থাকা অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। তবে এখন পুরো আন্দোলনে ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।

একই বিষয়ে শিল্প-পুলিশের পরিচালক সানা শামিনুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে যেসব শ্রমিক নেতা সামনে থেকে এ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে কিনাÑ সে বিষয় জানার চেষ্টা করছে শিল্প পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close