আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

রোহিঙ্গা নিপীড়ন

রাখাইনে ভয়াবহ অপরাধে দায়ীদের বিচার চায় যুক্তরাজ্য

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ভয়ানক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেটার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় যুক্তরাজ্য। এই ইস্যুতে দেশটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা, মিয়ানমার-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক, যুক্তরাজ্যের মিয়ানমার নীতি নিয়েও কথা বলেছেন।

গত বছর আগস্টে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে সেনা অভিযান জোরদার করলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা এসব মানুষ খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ ভয়াবহ নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন। এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ জোরালো করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্যও রয়েছে। দায়ীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, কিছু সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু সংশ্লিষ্টতা ছিল। তবে গত বছর রাখাইনের ঘটনার পর আমরা সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। মিয়ানমারের সরকার থেকে সামরিক বাহিনীকে আলাদা কঠিন কারণ তারা সরকারের অংশ। রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল চাগ বলেন, এই ভয়ানক অপরাধে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে কী ঘটছে তা দেখতে আমরা আগ্রহী। সামগ্রিকভাবে এটা মিয়ানমারের স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা ভবিষ্যতে এই বার্তা দেবে যে, কোনো কিছু করে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না। আমরা আমাদের পদক্ষেপে পুরো ব্যবস্থাকে লক্ষবস্তু বানাচ্ছি না। আমরা শুধু যারা দায়ী তাদেরকেই বিচারের মুখোমুখি করতে চাইছি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে শুধু রাখাইনের অপরাধের কথা বলা হয়নি, এতে কাচিন ও শান প্রদেশের কথাও বলা হয়েছে। এই সফরে আমি কারেন ও কারেন্নি গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে তাদের গোষ্ঠীর সঙ্গেও ঘটা একই ধরনের অপরাধের কথা বলেছে। এমনকি অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে আমরা এমন এক সংস্কৃতি দেখতে পাই যাতে কিছু ব্যক্তি ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য এসব ঘটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে আগ্রহী। কারণ আমাদের মতে, এসব অপরাধের দায়মুক্তি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে একটি গণতান্ত্রিক, টেকসই ও শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার গঠন কঠিন হবে।

রাখাইন ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সরকারের মিয়ানমার নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, ঠিক কী পরিবর্তন হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে এই নীতি আরো জটিল ও কঠিন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আরো জানান, গত ৩০ বছর ধরে আমাদের নীতি ছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সমর্থন। সেই নীতি এখনো চলছে। কিন্তু রাখাইনে যা ঘটেছে সে জন্য এটা করা আরো জটিল ও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ আমার আর কোনোভাবেই সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করতে পারছি না। ব্রিটিশ সরকারের কোনো কোনো অংশ ওই নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। তারা মনে করছে আগের নীতির পুরোপুরি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আর সে কারণে আমরা সরকার ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টাকে সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু সেটা আরো জটিল পরিস্থিতির তৈরি করেছে।

রাষ্ট্রদূত জানান, আমরা মিয়ানমারকে সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছি। গত বছর আমরা ২০ কোটি মার্কিন ডলারের মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছি। এর ফলে জাপানের পর আমরা দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দাতা দেশে পরিণত হয়েছি। তিনি বলেন, প্রচুর সমস্যায় জর্জরিত মিয়ানমার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এসব চ্যালেঞ্জের কোনো কোনোটির শেকড় কয়েক দশকের গভীরে। সে কারণে এগুলোর দ্রুত সমাধান বা সংশোধন করা যাচ্ছে না। মিয়ানমার ও দেশটির মানুষের বন্ধু হতে চায় যুক্তরাজ্য। আমরা যতটা সম্ভব সাহায্য ও সমর্থনকারীও হতে চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close