চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

চট্টগ্রামে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা

ওসিসহ ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ

চট্টগ্রামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে আকবর শাহ থানার ওসি জসীম উদ্দীনসহ ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তির স্ত্রী রুবি বেগম। চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালতে এই অভিযোগ করা হয়।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, আকবর শাহ থানার এসআই মো. আলাউদ্দীন, এসআই আশহাদুল ইসলাম, এএসআই সাইফুল ইসলাম, এএসআই আবু বকতর ছিদ্দিক ও কনস্টেবল মো. নুরুল আলম। অন্যদিকে, ভুক্তভোগী মো. আবুল কাশেম প্রকাশ আলমগীর নগরের আকবর শাহ থানাধীন পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল মসজিদ ঘোনা এলাকার বাসিন্দা।

বাদী পক্ষের আইনজীবী ফজলুল করিম ভুঁইয়া বলেন, আদালতে এজাহারটি আমরা জমা দিয়েছি। অভিযোগের সপক্ষে সেখানে অনেক তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ও দন্ডবধির ১৬১ ওও ১২০ বি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে আগামী ২৪ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য রেখেছেন আদালত।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদ ঘোনা এলাকায় মুরগি বিক্রি করেন আলমগীর। তার শ্যালক নুরে আলম একই এলাকায় গরু-ছাগল ও কবুতর লালন পালন করে বিক্রি করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬-৭টার দিকে একই এলাকায় ইব্রাহিম নামের এক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তখন ইব্রাহিমকে নিয়ে প্রথমে আল আমিন হাসপাতালে যান আলমগীর, ইব্রাহিমের স্ত্রী ও দুই শ্যালকসহ স্থানীয় সুমন ও মিজান। তখন আল আমিন হাসপাতাল আহতকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ইব্রাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে এক পুলিশ সদস্য আলমগীরকে আটক করে পুলিশ বক্সে নিয়ে রাখে।

আটকের কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইব্রাহিম মারা যাওয়ায় আকবর শাহ থানায় হত্যা মামলা হয়েছে এবং থানার নির্দেশে আলমগীরকে আটক করা হয়েছে। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০-১১টার দিকে আকবর শাহ থানার এসআই আশহাদুল ইসলাম এসে হত্যা মামলার কারণ দেখিয়ে আলমগীরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে নিয়ে যায়। এরপর আলমগীরের মা আনোয়ারা বেগম ও শ্যালক নূরে আলম থানায় গেলে তাকেকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা-১১টার দিকে আলমগীরের শ্যালক আলম থানায় ঢুকে তাকে নাস্তা দিয়ে আসে। সেখান থেকে বেরিয়ে আলম তার বোন আলমগীরের স্ত্রীকে জানান যে, এসআই আলাউদ্দীন দুই লাখ টাকা চেয়েছে, উক্ত টাকা না দিলে মৃত ইব্রাহিমের হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেবে। একই বিষয়টি নিয়ে রাত ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে আলমগীরের শ্যালক আলমসহ স্থানীয় লোকজন ওসি জসীমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে থানায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলমগীরকে নাস্তা দিতে থানায় যান মা, স্ত্রী ও শ্যালক। তখনও শ্যালক আলম ছাড়া অন্যদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেরিয়ে আলম পুনরায় জানায়, দুই লাখ টাকা ওসি জসীম ও এসআই আলাউদ্দীনকে না দিলে পুলিশ বাদী হয়ে ইব্রাহিম হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেবে। একই দিন দুপুরে এলাকায় জানাজানি হয় যে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইব্রাহিমের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে এবং ওই মামলায় ইব্রাহিম ও তার শ্যালক আলমকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আলমগীরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরপর আদালতে এসে কাগজপত্র তুলে বাদী জানতে পারেন, ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১টায় আলমগীরের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। একই মামলায় পলাতক আসামি করা হয়েছে আলমগীরের শ্যালক আলমকে। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে আটকের পর ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুর পর্যন্ত আলমগীর পুলিশের হেফাজতে ছিলেন এবং অস্ত্র মামলার ঘটনার সময়ও তিনি থানা হাজতেই আটক ছিলেন। এরপরও দুই লাখ টাকা না পেয়ে পুলিশ মিথ্যা অস্ত্র মামলায় আলমগীরকে আসামি করেছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close