গাজী শাহনেওয়াজ

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সব নির্বাচন হবে অভিন্ন প্রতীকে

* পছন্দের প্রার্থীকে প্রতীক দিয়ে বরখাস্ত ইসির কর্মকর্তা * বিধিমালা সংশোধন হচ্ছে

জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন হবে আগামীতে অভিন্ন প্রতীকে। সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতীক হলে আইনি জটিলতা দেখা দিবে কি না তা খতিয়ে দেখছে কমিশনের কমিটি। এই কমিটিই অভিন্ন প্রতীক করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। কমিটির মতে, জটিলতা নেই, তবে এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রার্থীদের মধ্যে পছন্দ-অপছন্দের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। এ ইস্যুতে রীতিমতো গলধঘর্ম রিটার্নিং কর্মকর্তারা। দেখা যায়, প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের তোপের মুখে পড়তে হয় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। উটকো এই ঝামেলা এবং সমালোচনা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে অভিন্ন প্রতীকের চিন্তা রয়েছে কমিশনেও।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে প্রতীক। একইভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর (জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ) জন্য আলাদা আলাদা প্রতীক নির্দিষ্ট রয়েছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কি প্রতীক রয়েছে, অনেক সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের নির্বাচনের নানামুখী প্রস্তুতির কারণে সব গুলিয়ে ফেলেন। সম্প্রতি একটি নির্বাচনে নীতিবহিভর্‚ত প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে বিব্রতকর ঘটনা ঘটিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের এক রিটার্নিং কর্মকর্তা; পরিস্থিতি সামলাতে তাকে বরখাস্ত করে কমিশন।

ইসির তথ্যমতে, ইসির মাঠ প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে স্থানীয় সরকারের প্রত্যেকটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন তারা। সম্প্রতি এক কর্মকর্তাকে স্থানীয় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়; যিনি কমিশন সচিবালয়েও কয়েকদিন চাকরি করেছিলেন। এই কর্মকর্তা ২০০৫ সালে থানা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন।

সম্প্রতি নোয়াখালীতে দায়িত্ব পালন করার সময় তার নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় সরকারের একটি পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে ইসি ওই কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করেন। কিন্তু পৌরসভার নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পছন্দের প্রতীক দিয়ে পুরো নির্বাচনটি ভÐুল হওয়ার উপক্রম হয়। কারণ প্রার্থীর চাহিদানুযায়ী, দেওয়া প্রতীকটি পৌরসভা নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট তালিকাতে ছিল না। এ নিয়ে ব্যালট ছাপানোসহ নানা জটিলতার সম্মুখীন কমিশনকে হতে হয়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ন্যস্ত করেছে কমিশন।

ইসির একজন উপসচিব খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনেক ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পাশাপাশি, অনেক সময় প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে পছন্দ-অপছন্দ থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে, পছন্দের প্রার্থীর চাওয়া প্রতীকের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তায় ঝামেলায় পড়ে যান। কারণ ব্যালট মুদ্রণের সময় কমিশনের নির্ধারিত প্রতীকের বাইরে ব্যালটে ভিন্ন প্রতীক প্রার্থীর অনুক‚লে ছাপানোর বিধান নেই। যদি ভুল করে একটি নির্বাচনের প্রতীক অন্য নির্বাচনে ঢুকে যায়, তাহলে পুরো মুদ্রিত ব্যালট বাতিল করে পুনরায় তা ছাপতে হয়। নোয়াখাীলর একটি পৌরসভায় এ ধরনের একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে অন্যত্রে বদলি করেছে।

সূত্রমতে, নোয়াখালীর পৌরসভা নির্বাচনে ভুল প্রতীক প্রার্থীকে দেওয়ার পর অভিন্ন প্রতীকে জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচন আগামীতে অনুষ্ঠানের তাগিদ অনুভব করে কমিশন। পরে একটি সাব-কমিটি গঠন করে অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনের বিষয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। গঠিক কমিটি অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করাতে কোনো জটিলতা নেই, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশনকে প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। কমিশনের অনুমোদন পেলে আগামীতে সব নির্বাচন হবে অভিন্ন প্রতীকের আলোকে। এর ফলে প্রার্থীদের পছন্দ-অপছন্দ থাকলেও প্রতীক নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে না বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতীকের বিবরণ : এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদের জন্য প্রতীক নির্ধারিত আছে ৬৪টি, যার মধ্যে নিবন্ধিত দলকে দেওয়া হয়েছে ৩৯টি প্রতীক। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোকে সংরক্ষিত ওই প্রতীক থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এবার নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ৭৬ দল; সবগুলো নিবন্ধিত হলে প্রতীক সংকটে পড়তে হবে কমিশনকে।

একইভাবে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩৪ প্রতীকের মধ্যে চেয়ারম্যান পদের ১২টি, সংরক্ষিত মহিলা পদের ১০ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ১২টি। আর সিটি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদের জন্য ৩৯টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত ও সাধারণ পদে যথাক্রমে ১০টি ও ১২টি। উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ৩৯টি করে এবং চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১৪টি। পৌরসভা ও ইউপিতে একই ধরনের প্রতীক রয়েছে।

জেলা পরিষদ ছাড়া সংসদসহ স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচন দলীয় হওয়ার কারণে অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করাতে কমিশনের জটিলতা অনেক কমে আসবে, এমনটাই মনে করছেন কমিশন নীতি-নির্ধারকরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist