মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮

খুলনায় টানা ২০ দিনের শ্রমিক আন্দোলন

রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ পাটকলে উৎপাদন হ্রাস সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন

বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে গত ২০ দিনে খুলাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ পাটকলে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিদিন ৮ পাটকলে উৎপাদন ক্ষতি হচ্ছে ২৮২ মেট্রিক টন। প্রতি মেট্রিক টন পাটজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য এক লাখ টাকা হিসেবে উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার। এছাড়া নষ্ট হচ্ছে মিলের গুদামে থাকা লাখ লাখ টাকার কাঁচা পাট।

বন্ধ থাকা পাটকলগুলো হলো- খালিশপুর এলাকার ক্রিসেন্ট জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, স্টার জুট মিল; আটরা শিল্প এলাকার আলীম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল এবং যশোরের রাজঘাট এলাকার জেজেআই জুট মিল। উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে এসব মিলে প্রতিদিন গড়ে ২৮২ মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদিত হত। মিলগুলোর উৎপাদন টার্গেট হিসেবে ক্রিসেন্ট জুট মিলে দৈনিক গড় উৎপাদ ৭০ থেকে ৭২ টন, প্লাটিনাম মিলে ৬০ টন, জেজেআই মিলে ৩০ টন, ইস্টার্ন মিলে ১৬ টন, আলীমে ১১ টন,স্টার মিলে ৪০ টন, দৌলতপুর মিলে ১৫ টন এবং খালিশপুর জুট মিলে ৪০ টন। গত ২৮ ডিসেম্বর শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করায় সাপ্তাহিক ছুটি ব্যতিত ২০ দিন মিলের উৎপাদন বন্ধ। এদিকে, ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার পাটকলের শ্রমিকরা লাল পতাকা মিছিল বের করে। মিছিটি শিল্পাঞ্চলের ও খুলনার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্ব-স্ব মিলে গেটে গিয়ে সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

খালিশপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাটকলগুলো অনেকটা জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ। কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেগুলোতে কোনো ক্রেতা নেই। মিল গেটও ফাঁকা; অলস সময় কাটাচ্ছেন নিরাপত্তা প্রহরীরা। গত ১৮ ডিসেম্বর ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনাসহ দেশের ২৩ টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলন চলাকালে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করতে ব্যর্থ হয় বিজেএমসি। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ২৮ ডিসেম্বর মিলের চাকা বন্ধ করে দিয়ে জোরেসোরে আন্দোলনে নামে। মিল সূত্রে জানা গেছে, খালিশপুর জুট মিলে পাঁচ সপ্তাহের বকেয়া মজুরির তিন কোটি টাকা, দৌলতপুর জুট মিলে পাঁচ সপ্তাহের এক কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট মিলে আট সপ্তাহের মজুরির ১২ কোটি টাকা, প্লাটিনাম আট সপ্তাহের মজুরির প্রায় সাড়ে ১০ কোটি, স্টার জুট মিলে পাঁচ সপ্তাহের বকেয়া দুই কোটি ৭৫ লাখ, জেজেআই জুট মিলে ১১ সপ্তাহে ছয় কোটি ৬০ লাখ, আলীম জুট মিলে আট সপ্তাহে এক কোটি ৯২ লাখ এবং ইস্টার্ন জুট মিলে ছয় সপ্তাহের মজুরি দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করতে পারছে না। শ্রমিকরাও উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, সকল বকেয়া মজুরি এককালীন পরিশোধ করা না হলে তারা কাজে যোগদান করবে না বলে সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। মিলগুলো চালু করতে বিজেএমসি থেকে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের হাতে টাকা না থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মিল সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে। মিল বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিক রিকশা, ভ্যান চালাচ্ছে। অনেক শ্রমিক বাড়ি চলে গেছে। যার কারণে এসব এলাকার হাট বাজার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, চা-পান ও মুদি দোকানসহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দাভাব বিরাজ করছে।

বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক ও খুলনার আঞ্চলিক সন্বয়ক গাজী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, মিল চালু করতে প্রতিনিয়ত শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। কিন্তু তারা আগে বকেয়া মজুরি পাওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। কবে নাগাদ মজুরি পরিশোধ করা হতে পারে- জানতে চাইলে গাজী শাহাদাৎ হোসেন অবশ্য বলেন, এটা এখনো নিশ্চিত নয়।

উল্লেখ্য, বকেয়া মজুরির দাবিতে খুলনা শিল্পাঞ্চলে অনেকদিন ধরে শ্রমিক ধর্মঘট চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist