reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রেল যোগাযোগের আওতায় আসুক সারা দেশ

দেশের গণপরিবহন মাধ্যমগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় পরিবহন খাত। স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেলওয়ের পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরের সরকারগুলো রেলপথের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা নেয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও একক সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পরে রেলপথের উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চালু হয় মেট্রোরেল, যা নগরীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা দেশেই রেল যোগাযোগের সম্প্রসারণ ঘটেছে।

এবার দীর্ঘদিনের দুঃখ ঘুচতে যাচ্ছে উত্তরের জনপদের মানুষের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ এখন আর উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন নয়; বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর এই রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বগুড়া জেলা প্রশাসন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সঙ্গে বগুড়ার রেলপথের দূরত্ব যেমন কমবে, তেমনি সম্প্রসারিত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে রাজধানীর সঙ্গে বগুড়ার রেলপথের দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার; সময় বাঁচবে তিন-চার ঘণ্টা। জীবনযাত্রায়ও আসবে গতি। আগামী বছরের শুরুতেই নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরুর খবরে শুধু বগুড়া নয়, আশপাশের জেলার মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ঘুচতে যাচ্ছে উত্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ।

প্রসঙ্গত, বগুড়ার সঙ্গে সিরাজগঞ্জের সরাসরি রেলপথ নেই। অথচ দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। বর্তমানে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ না থাকায় এই অঞ্চলের ট্রেনগুলো সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হয়। বাড়তি পথ ঘুরতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে, তেমনি বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। বগুড়া থেকে যেখানে সড়কপথে ঢাকায় পৌঁছাতে লাগে ছয় ঘণ্টা, সেখানে ট্রেনে যেতে লাগে ৯-১০ ঘণ্টা। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলপথে অন্তত তিন-চার ঘণ্টা সময় বাঁচবে। একই সঙ্গে বছরে আন্তনগরের দুটি ট্রেনে জ্বালানি সাশ্রয় হবে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি। রেলপথ নির্মাণ করা হলে সেই অপেক্ষার অবসান হবে এটা আশা করাই যায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রেল খাতে সব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্দেশীয় রেল যোগাযোগব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে এবং রেল পরিষেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।’ রাজধানীতে রেল যোগাযোগ বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা শহরে রেল যোগাযোগের একটা আলাদা পরিবেশ তৈরি হবে। এতে মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত সহজ এবং আমাদের তেলের খরচ বাঁচবে। ঢাকা শহরও যানজটমুক্ত হবে। সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

পদ্ম সেতু চালু হওয়ায় পুরো দক্ষিণাঞ্চলও পর্যায়ক্রমে রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে। রেলের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে সেগুলোর পরিপূর্ণ ফলাফল পেতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সারা দেশ রেল যোগাযোগের আওতায় আসবে এবং বর্তমানে যে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে তা শেষ হলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে রেলওয়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close