মো. খসরু চৌধুরী

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দৃষ্টিপাত

দেশ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে

বাঙালি জাতির ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের। একসময় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গা পাড়ের মানুষের বন্দনা ধ্বনিত হতো বিশ্বজুড়ে। ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা এ দেশের সমৃদ্ধি নিয়ে গর্ব করা হতো। বাঙালির বীরত্বের কথা জানত গ্রিক ও রোমের মানুষ। স্বাধীনতার পর বাঙালির যে নতুন যাত্রা শুরু হয়, তা সাড়ে তিন বছরের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং অবৈধ সেনাশাসকদের উত্থানে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে দুঃসময়ের অবসান ঘটে। ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুবাদে দেশ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য যুগান্তকারী বছর ছিল ২০২৩।

বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়ে অবারিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে একের পর এক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন। এ বছরও উদ্বোধনের তালিকায় আছে ছয়টি মেগা প্রকল্প। এগুলো হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, যমুনা বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, ডিপেন্ডেবল রানওয়ে, গাজীপুরের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশ। ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে বিশ্বের ৩৩তম দেশ হিসেবে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের এলিট ক্লাবে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক ও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে। বগুড়া ও গোপালগঞ্জে ৪০০ কেভির দুটি এবং বাঘাবাড়ীর ২৩০ কেভির একটি সঞ্চালন লাইন হয়ে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে করা হয়েছে ১২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ মেগা প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। রূপপুরসহ বড় ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর সুবাদে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়। অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে স্বাচ্ছন্দ্য। এক নতুন বাংলাদেশকে দেখতে পাবে বিশ্বসমাজ।

দারিদ্র্যদূরীকরণ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে। নানামুখী কর্মসংস্থানমূলক ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশে ক্রমেই কমছে দারিদ্র্যের হার।

নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার মধ্যে ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস, জিআর (খাদ্য), কাবিটা, কাবিখা এবং ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমানে মানুষ খাদ্য সুবিধা পাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ও বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ।

সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। কয়েক বছর ধরেই দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষা,

স্বাস্থ্য, পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলোচিত। গত

১৪ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন যা-ই বলি না কেন সব সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি- সব ক্ষেত্রই বিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়ের নাম।

একটি দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি বড় নির্ণায়ক জিডিপি। একটি দেশে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতের পুরো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের (পণ্য ও পরিষেবা- সবই) মূল্য ওঠে আসে জিডিপিতে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা যেভাবে ঘুুরছে, সেভাবে ঘুরতে থাকলে আমাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে, এটা নিঃসন্দেহে

বলা যায়। সব ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশে তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে- এটা প্রত্যাশা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ও খুলে গেছে অযুত সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্যদূরীকরণ ইত্যাদি সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এই অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ‘ঈর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেন। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে সব পাঠ্যবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে মেয়েরা পড়াশোনায় অনগ্রসর ছিল, এখন উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে মেয়েদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে এবং মেয়েরাও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়েছে।

দেশপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত উপার্জন দেশে পাঠাচ্ছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ হচ্ছে সুনিশ্চিত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

একসময় বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিল। বলা হতো অনুন্নত দেশ, তারপর বলা হতো উন্নয়নকামী দেশ। নিম্ন বা গরিব দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বড় অবদান রয়েছে। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারি, তাহলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে। গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারলে শিল্প-কারখানা আরো গড়ে উঠবে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। একসময় বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলত, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়ে ছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।

লেখক : সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close