reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে

জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে মিয়ানমার পরিস্থিতি। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক সরকারের তুমুল লড়াই চলছে। লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে সব এলাকায়। দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। এমনকি সশস্ত্র বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শত শত সদস্য হয় বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে; না হয় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশে।

অগ্নিগর্ভ মিয়ানমার পরিস্থিতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তেও। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমণ্ডতুমব্রু সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সঙ্গে গণতন্ত্রকামী সংগঠন আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে গত সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে দুজন নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে টিকতে না পেরে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে আশ্রয় নেয় সে দেশের ৩২৮ জন, যারা সে দেশের বিজিপি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্য। মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনা ও বিদ্রোহীদের যুদ্ধের মধ্যে সীমান্তের এপারে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি চলছে কয়েক দিন ধরে। সীমান্তলাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি এবং সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় এক মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এত দিন লড়াই চললেও এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। তবে গত শনিবার রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ তীব্র হয়। থেমে থেমে সে সংঘর্ষ এখনো চলছে।

উদ্বেগের বিষয়, রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা বাড়লে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ২২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিষয়টিকে মিয়ানমার সব সময় এড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বারবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান এবং সমাধানের জন্য বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অনেক দেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিলেও ভূরাজনীতির কারণে কোনো কোনো দেশ এ বিষয়টি থেকে বিরত থেকেছে। এর আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় সীমান্তরেখায় জড়ো হয়েছিল লাখো রোহিঙ্গা। সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপ, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা, যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি- এটাকে আগ্রাসন হিসেবেই দেখেছে বাংলাদেশ। নতুন করে সীমান্ত দিয়ে আর একটি রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে পারে তার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। সে জন্য সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক থাকতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান উত্তেজনার দ্রুত প্রশমন হওয়া প্রয়োজন মনে করছি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে শান্তিপূর্ণ তথা কূটনৈতিক পন্থায় সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক ভূমিকাও জরুরি। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় এখন চীন ও ভারতকে গুরুত্বের মধ্যে নিতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে সব মহলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সীমান্তে চলমান উত্তেজনা নিরসনে কৌশলী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close