reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাক টাঙ্গাইল শাড়ি

টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা শাড়ি। শতাব্দীপ্রাচীন এই শিল্পের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়, যার নাম থেকেই শাড়ির নাম টাঙ্গাইল শাড়ি হয়েছে। টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গেই এর নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা ভৌগোলিক অবস্থান যুক্ত।

সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় নিজস্ব জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশের বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়িকে। এ নিয়ে ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও দেয়। সেখানে বলা হয়- ‘?টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রং এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক।’ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন রেজিস্ট্রির তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তশিল্প বিভাগের জন্য আবেদন করেছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। টাঙ্গাইল শাড়িকে ধরা হয় নদীয়া ও পূর্ববর্ধমানের পণ্য হিসেবে। একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের গরদ ও করিয়াল নামে আরো দুটি শাড়িও যুক্ত হয় জিআই নিবন্ধিত তালিকায়। প্রশ্ন হচ্ছে- আমাদের পণ্য ভারতের বলে জিআই ট্রেডমার্ক পেয়ে যাচ্ছে, এর দায় কার? স্বাভাবিকভাবেই ভারতের এ ঘোষণায় বাংলাদেশের মানুষের ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা। বাংলাদেশের হাজারো মানুষ দেশটির মন্ত্রণালয়টির ফেসবুক পোস্টের নিচে কমেন্ট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সবারই একটি প্রশ্ন- টাঙ্গাইল শাড়ি কীভাবে ভারতের হয়? এ দাবি ভারত করতে পারে কি না? টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গেই এর নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা ভৌগোলিক অবস্থান যুক্ত। মানে এটি এমন একটি শাড়ি, যার উৎপত্তিই হচ্ছে টাঙ্গাইলে। আর এই টাঙ্গাইল হচ্ছে বাংলাদেশের একটি জেলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্বের দাবি কোনোভাবেই ভারত করতে পারে না। কারণ, ভৌগোলিকভাবে টাঙ্গাইল কোনোকালেই পশ্চিমবঙ্গের ছিল না।

মূলত কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে ওই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে বিশ্বব্যাপী এর ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে ডিজাইন, পেটেন্ট ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে সরকারের এ বিভাগটি। এখন পর্যন্ত দেশে জামদানি, ইলিশ, রাজশাহীর সিল্ক, বগুড়ার দই, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চালসহ ২১টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। কোনো একটি পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যগুলো অন্য দেশের সমজাতীয় পণ্য থেকে আলাদাভাবে চেনা যায়। এর ফলে ওই পণ্যের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সম্পদ এভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্র দাবি করবে, এটি হতে দেয়া যায় না।

গত সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি-সংক্রান্ত এক জরুরি সভা হয়। এ সময় শিল্পসচিব টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিবন্ধনের জন্য সব প্রক্রিয়া দ্রুত অনুসরণ করে আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরাও আশা করব, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুতই শেষ হবে। আর এর মাধ্যমে বিশ্বদরবারে আবার নিজের আসন লাভ করবে বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের শাড়ি, যা একান্তই আমাদের গর্বের ধন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close