reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪

দেশের অগ্রযাত্রায় সমবায়ের বিকল্প নেই

দারিদ্র্যবিমোচন ও সমাজ উন্নয়নের এক মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে সমবায়। স্বনির্ভর জাতি গড়তে সমবায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক। কারণ সমবায় হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবামূলক একটি স্বশাসিত সংগঠন, যা নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে ইউনিয়নভিত্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সুলভমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য এবং কৃষি উপকরণ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তা ছাড়া, দেশের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে কৃষি সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়েছিল।

বলা সংগত, এই উপমহাদেশে সমবায়ের যাত্রা শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিলেতে পড়াশোনা করতে গিয়ে ও রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে কৃষি সমবায়ের ধারণা লাভ করেন। তিনি এ উপমহাদেশে তা বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর পূর্ব বাংলায় ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকারের কৃষি ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; আর তখন থেকেই মূলত সমবায় নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সমবায়কে বেছে নিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সমবায়কে সংবিধানের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন গ্রামে গ্রামে বহুমুখী সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গ্রাম অর্থনীতিকে চাঙা করতে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এ হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারও সমবায় নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সমবায়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প নেন। এসব প্রকল্প ও উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। সমবায়ের শক্তি কাজে লাগাতে পারলে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের জন্য অফুরন্ত সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো আরো কার্যকর করতে হলে সমবায় আইন ও বিধি যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্ব দেন। গত সোমবার রাজধানীতে সমবায় অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সমবায় যেহেতু আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তাই যেকোনো অব্যবস্থাপনা এ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। তাই সমবায়কে শক্তিশালী করতে হলে যুগোপযোগী আইন তৈরি করে তা কার্যকর করতে হবে। সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চালানোর জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ এজন্য সমবায় সমিতিগুলোর নিবন্ধন দান ও তাদের বার্ষিক নিরীক্ষা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বলাবাহুল্য, দেশের দরিদ্র মানুষের সীমিত সামর্থ্য ও সম্পদ একত্র করে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অজ্ঞতা, রোগ ও অন্যান্য আর্থসামাজিক সমস্যা দূর করে সমাজের প্রত্যেক দরিদ্রকে সুস্থ, আত্মনির্ভর ও আলোকিত নাগরিক হিসেবে উন্নিত করাই সমবায় আন্দোলনের লক্ষ্য। সমবায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারলে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের মতো আমাদের মধ্যম আয়ের বাংলাদেশেও উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওয়া সম্ভব, সম্ভব সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close