reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

খাদ্য অপচয় রোধ জরুরি

বিশ্বে গত কয়েক দশকে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ সংখ্যাটি শুধুই বেড়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপুষ্ট মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ কোটি। বিশেষ করে বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক ধাক্কা এবং করোনা মহামারি এতে প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া বেড়েছে খাবারের মূল্যও। এটিও মানুষের ক্ষুধার্ত থাকার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

ঠিক এর বিপরীত চিত্রটি এমন- জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়, অর্থমূল্যের দিক থেকে যা প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। এই অপচয়ের মাত্রা বাংলাদেশেও কম নয়। প্রতি বছর এখানে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় হয় ৬৫ কেজি। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) তথ্য বলছে, দেশে ফসলের মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি বছর ৫০ লাখ টনের বেশি খাদ্য অপচয় হয়। আর বাড়িতে খাবার নষ্টের বার্ষিক পরিমাণ ১.০৭ কোটি টন। সব মিলিয়ে বছরে নষ্ট হওয়া খাদ্যের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ টন। ফসলের উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি (পোস্ট-হার্ভেস্ট লস) ও খাবার টেবিলে খাদ্যের অপচয় কমাতে সরকারের যে কয়েকটি চলমান উদ্যোগ রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে অপচয়ের মাত্র ৩.৩৫ শতাংশ রোধ করা সম্ভব বলে কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্যবিশ্লেষণ করে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী ৮ শতাংশ খাদ্য খামারে, ১৪ শতাংশ খামার থেকে খুচরা দোকানে পৌঁছাতে এবং ১৭ শতাংশ দোকান ও বাসাবাড়িতে নষ্ট হয়।

খাদ্য অপচয় সারা বিশ্বেই একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে মানুষের জন্য উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই অপচয় হয়। অথচ বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যাটও কিন্তু কম নয়। যদিও বাংলাদেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য কিংবা কেউ না খেয়ে মারা যায়- এমনটিও শোনা যায় না। তা সত্ত্বেও খাবার তো অপচয় হয়। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ সূচকে বাংলাদেশ শাকসবজি উৎপাদনে ১৪তম এবং চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। রবিশস্যের কারণে শীতকালে খাদ্যশস্যের দামে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও দেশে খাদ্য অপচয় নতুন একটি আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনি একপর্যায়ে বেড়ে যাচ্ছে খাবারের দামও। এ সংকট রোধের উপায় হচ্ছে খাদ্য চেইনের প্রতিটি ধাপে মাঠ থেকে শুরু করে অপচয় কমানো। খাদ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো, উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে আনাসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নের জন্য কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বর্তমানে ৮টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলো চালু হলে খাদ্য ব্যবস্থপনায় শৃঙ্খলা আসবে, এটা আশা করাই যায়।

বর্তমান বিশ্বে খাদ্য অপচয় একটি বড় সংকট। খাদ্য অপচয়ের প্রভাব একদম সরাসরি আমাদের ওপর না পড়লেও, এর সুদূরপ্রসারী পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতিকর প্রভাবের বাইরে আমরা কেউই নেই। খাবারের অপচয় রোধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে; কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে আমাদের প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও আন্তরিকতা কতটুকু? বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। খাদ্য অপচয় রোধে সবারই সচেতন হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close