reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

দূষণ রোধে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিকল্প নেই

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে রাজধানী ঢাকা। বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর তালিকায় ঘুরেফিরে প্রথম স্থান দখল করছে এই নগরী। ঢাকার বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বায়ুর মান এতটাই খারাপ থাকে যে এই পাঁচ মাসে সারা বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। নগরীতে বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলো।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থানও প্রথম দিকেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, অন্য দেশগুলো তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে, সেখানে ঢাকা ব্যর্থ। নগরীতে বায়ুদূষণের অন্যতম একটি বড় উৎস বর্জ্য। আর এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। আবার শহরের মধ্যে উন্নয়নকাজের ফলে সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণও ঠিকমতো করে উঠতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশনের কোনোটিই। রাজধানীর বায়ুদূষণের আরেকটি বড় কারণ হলো আশপাশের অসংখ্য ইটভাটা। এর মধ্যে অনেক আছে অবৈধ ইটভাট। এ ছাড়া ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা আছে, যেগুলো দূষণের অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ ইটভাটা এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা, কাঠ ব্যবহার করা হয়। ফলে এটা থেকে প্রচুর ছাই তৈরি হয় এবং কার্বন-মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন-ডাইঅক্সাইডের মতো দূষিত কণা বাতাসের সঙ্গে মেশে। বায়ুদূষণ হ্রাস করার লক্ষ্যে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ শীর্ষক আইনও গৃহীত হয়। কিন্তু সেই আইনেরও তেমন প্রয়োগ নেই।

বলা বাহুল্য, ঢাকার দূষিত বায়ু স্বাস্থ্যের ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বায়ুদূষণের ফলে মূলত ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটে। এ ছাড়া সর্দি, কাশি, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা রোগের সংক্রমণ বাড়তে পারে। কিডনি ও চোখের সমস্যাও হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের হার বাড়ে। আমাদের গড় আয়ু বাড়ছে। কিন্তু বায়ুদূষণের কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। বায়ুদূষণের তালিকার শীর্ষ থেকে নামতে হলে সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের কাজের পরিধি বাড়াতে হবে; দূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ অবস্থায় ঢাকার আশপাশে পরিবেশ দূষণকারী ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। গত শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ থানার পূর্ব বাসাবোয় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ঢাকার আশপাশে অনেক ইটভাটা আছে, যা পরিবেশ দূষণ করছে। বায়ুদূষণ করছে। অনেক অবৈধ ইটভাটাও আছে। আগামী ১০০ দিনের মধ্যে এসব ইটভাটা বন্ধের চেষ্টা করা হবে।’

ঢাকা নগরীতে দূষিত বাতাস নীরব ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, ফলে ত্বরান্বিত করছে অকালমৃত্যু। মানবসৃষ্ট দূষণ যে একেবারেই রোধ করা যাবে না, তা নয়। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগ। আমাদের সামান্য সতর্কতা আর সচেতনতায় অনেকাংশেই বায়ুদূষণ প্রতিরোধ সম্ভব। বায়ুদূষণের কারণগুলো যেহেতু সবার জানা, সেহেতু প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়। একই সঙ্গে আমরা আশা করব, পরিবশেমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন, সেটারও প্রতিফলন ঘটবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close