জান্নাতুল মাওয়া সাবিরা
মুক্তমত
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়ক
বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল দেশ। সংখ্যাগুলোও তা বলে দেয়। তবে তার থেকে বড় বার্তা হলো বাংলাদেশের রয়েছে একটি প্রাণোদ্দীপ্ত স্থিতিশীল অর্থনীতি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হলো যা মানুষের স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ রয়েছে এবং বাস্তবিক অর্থে যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কর্মসংস্থান, যা একটি সঠিক পরিমাণ মজুরি প্রদান করে, কর্মসংস্থানে সমর্থন করে এমন জিনিস, যেমন কর্মীদের সুরক্ষা, বেতন দেওয়া অসুস্থ ছুটি এবং শিশুযত্ন এবং নির্ভরযোগ্য পরিবহন অ্যাকসেস। আমরা জানি, আর্থিক ব্যবস্থা ব্যক্তি, ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তহবিলের মসৃণ এবং নিরাপদ স্থানান্তর সক্ষম করে। তারা অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা প্রদান করে, যেমন ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট কার্ড এবং ডিজিটাল ওয়ালেট, যা লেনদেনের নিষ্পত্তি এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকেও সমর্থন করে। একটি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অন্যদিকে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতাকে ভারসাম্য প্রদানের জন্য শুধু অর্থনৈতিক কাঠামোতে বিনিয়োগ করলেই চলবে না বরং শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করে মানবসম্পদ উন্নয়নের সহায়তা করতে হবে। অন্যদিকে গবেষণায়ও বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। এমনকি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও দরকার। দারিদ্র্যবিমোচনের সঙ্গে সঙ্গে আয়-বৈষম্য হ্রাসের ওপরও জোর দিতে হবে। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়-বৈষম্য কমলেই শুধু অর্থনীতির সুফল সবাই পাবে। ধারণা করা হয়, দেশে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি জনশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। যেখানে কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে আর ৯৫ শতাংশই বেসরকারি উৎসে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ হাজার বা ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ২৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। দেশে বেকারের সংখ্যা কমেছে। অর্থাৎ অনেক মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। এ ছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেব। ১. কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি গ্রোথ, ২. সবার সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে সাম্য ও সমতা। ৩. জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা। কিন্তু এসবের জন্য প্রয়োজন জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করা। আমাদের দেশে বাজারের চাহিদার সঙ্গে শ্রমের জোগানের মিল নেই। কিন্তু চাহিদা মেটাতে সেই জায়গাগুলোতে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নিয়োগ হচ্ছে। বাজার উপযোগী কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আমাদের দরকার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চ কারিগরি শিক্ষা, যার মাধ্যমে আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলা করতে পারব। সরকার আগামী পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা করলেও বেসরকারি খাতকে ভবিষ্যতের প্রয়োজন মাথায় রেখে বিনিয়োগ করতে হবে এবং তা হতে হবে অন্তত ১৫-২০ বছরের কথা চিন্তায় রেখে। লক্ষ রাখতে হবে, পরিকল্পনা, বিনিয়োগ যা-ই হোক না কেন, সবকিছু দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বিত পদ্ধতিতে যেন হয়। আর বিনিয়োগের ব্যাপার তো রয়েছেই। যেখানে সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত পদচারণ অনিবার্য। কেননা একটি দেশের মানব জাতিকে সম্পদে পরিণত করার জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ আরো বহুল খাতে (যা যা দরকার) তা পূরণ করতে হয়। বিশেষ করে আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে তা একটু বেশিই অগ্রগণ্য। মানবসম্পদই দ্বিতীয় বিষয়টি মানে, পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে তৈরি করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং তা নিশ্চিত করে জাতীয় উন্নয়নে অগ্রসর হয়। আর ওপরে কিছু তথ্য থেকে আমরা এটা জানতে পারে যে বিগত কয়েক বছরে তা অনেকটা অগ্রগতি লাভ করেছে। কিন্তু একটা সমস্যা এখানে থেকেই যায়, জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও বেকারত্ব অনেকটা নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। তবু নিজস্ব কিছু কর্মশালার মাধ্যমে সঠিক প্রশিক্ষণ দ্বারা, আর্থিক সমস্যা থাকলে তা নির্মূল করার চেষ্টা করার মাধ্যমে অর্থের জোগান দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে নিজস্ব কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হবে।
স্থিতিশীল অর্থনীতি একটি দেশের মানবকে সম্পদে পরিণত করতে পারে, কেননা যখনই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা অর্জিত হবে। ঠিক তেমনি দক্ষ ও অদক্ষ যুবকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। এখানে অদক্ষ বলতে দক্ষরা তাদের নিজস্ব কাজের দ্বারা অদক্ষদের সঠিক কর্মশালার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলবে। যদিও সেখানে সঠিক অর্থায়ন প্রয়োজন। তবুও যখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে আর মানবরা নিজেদের সম্পদে পরিণত করবে, তখন একটি দেশের অর্থায়নে অর্থাৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
"