ফারিহা হোসেন প্রভা

  ১১ জানুয়ারি, ২০২২

মুক্তমত

রাজনীতিতে শিষ্টাচার অপরিহার্য

রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমশ কলুষিত, প্রতিহিংসা ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মতো ঘৃণ্যতম ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে প্রতিপক্ষের নেতাদের লক্ষ্য করে অশোভন ভাষার ব্যবহারও। অথচ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে দেশের সাধারণ মানুষ এ ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি আশা করে না। এ ধরনের কর্মকান্ড কখনো দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। অনুরূপ সাংবাদিক নামধারী দলকানাদের কর্মকান্ডও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদণ্ডবিভাজন ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। নিকট অতীতে এ ধরনের ঘটনার বহু নজির আছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ দূরে থাক প্রতিহিংসার লেশমাত্র ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রভৃতি গ্রন্থ পাঠে এই সত্যের প্রতিফলন মেলে। ঠিক অনুরূপ তার কন্যা এশিয়ার প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন ও রাজনীতি তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই। মূলত একজন মিডিয়াকর্মী কর্তৃক সরকারি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে নিয়ে বিদ্ধেষমূলক, সম্ভবত অন্য কারো উসকানিতে ধান ভাঙতে শিবের গিত গাইলেন। তিনি তার নিবন্ধে ড. হাছান মাহমুদের সমালোচনা করতে গিয়ে নিজেই ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ড. হাছান মাহমুদের নাম বিকৃত করে যে বক্তব্য দিলেন, সে সম্পর্কে কিছুই লেখেননি নিবন্ধে। তাহলে তার এই নিবন্ধ কি এক পেশে ও পক্ষপাত দোষে দুষ্ট নয়?

গত ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার মতাতম বিভাগে মহিউদ্দিন খান মোহন ‘ও পাগল, পাগল মনরে আমার...’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই নিবন্ধ পড়ে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। তা পড়ে মনে হয়েছে, তিনি দলদাস, অন্ধ দলকানা হয়ে নিজেই পাগলের মতো প্রলাপ বকেছেন। যতটুকু মনে পড়ে এই নিবন্ধের লেখক হিসেবে তিনি যত না পরিচিত, তার চেয়ে বেশি পরিচিত বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ততায়। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেসসচিব ছিলেন। তারও আগে বিএনপি-দলীয় মুখপত্র দৈনিক দিনকালের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এতে ধরে নেওয়া যায় তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তবে রাজনীতি করা কোনো ব্যক্তির জন্য দোষের নয়, বরং যখন যে কেউ যেকোনো দলের আদর্শ লালন করতে পারেন। তবে সাধারণত এসব পরিচয় ধারণ ও বহন করলে তখন ওই সংবাদকর্মীর পক্ষে নিরেপক্ষতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। কারণ একজন লেখকের যখন কোনো দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে, তখন ওই লেখকের পক্ষে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা দূরাশা মাত্র। মহিউদ্দিন খান মোহনের নিবন্ধ পাঠে অন্তত তাই মনে হয়েছে। তাছাড়া তার নিবন্ধে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে নিয়ে ধান ভাঙতে শিবের গিত গেয়েছেন।

মূলত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নাম বিদ্রুপ বলে ‘হাছা মাহমুদ’ বলে উল্লেখ করেন। এমনকি তাকে ‘নাবালক’ আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা পরদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য মূলত রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থি। একই সঙ্গে কোনো মুসলমানের নামে বিকৃতভাবে সম্বোধন করা পবিত্র ধর্ম ইসলামের পরিপন্থি। মির্জা ফখরুলের এ ধরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একজন ভদ্রলোক হিসেবে জানতাম। তার এই বক্তব্য তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তখন ড. হাছান মাহমুদ উপমা হিসেবে ‘রাস্তার একজন পাগলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একজন পাগল যখন রাস্তায় হাঁটেন তখন রাস্তার অন্যকেও তার মতোই ভাবেন’- এটাই বাস্তবতা। তবে হাছান মাহমুদের এই বক্তব্য নিয়ে পরবর্তীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা তার দল কোনো মন্তব্য করেনি।

এ দেশের মিডিয়া জগতের অনেকেই ড. হাছান মাহমুদকে জানেন একজন মার্জিত ও পরোপকারী মানুষ হিসেবে। এ ছাড়া তিনি একজন পরিবেশবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক। এর আগে তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। উল্লেখ যোগ্য যে, দুই দুইবার করোনায় আক্রান্ত হয়েও সংবাদপত্রসেবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দাঁড়িয়েছেন দেশের গরিব-দুঃখী আর্ত মানুষের পাশে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম হাইস্কুলে পড়াকালে হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরবর্তীতে মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রবাসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রায় ৪৫ বছরের।

মনে রাখা দরকার, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকবেই। তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করাও দোষের কিছু নয়। কিন্তু এর একটা সীমা-পরিসীমা থাকা উচিত।

তাছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ তাদের অনেক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অপমান করে কথা বলেন। তারেক রহমান বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনাকে, হাসিনা বলেন। প্রসঙ্গত খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন সমবেদনা জানাতে। কিন্তু সেদিন তাকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা দলদাস সাংবাদিক মোহন সাহেবরা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- এটিও প্রশ্ন থেকে যায়।

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close