reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ আগস্ট, ২০২১

বজ্রপাতের মাত্রা বাড়ছে সাবধানতা জরুরি

বজ্রপাতে বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ মারা যায় বাংলাদেশে। যা আমাদের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। বিপরীতে বলা যায়, ‘এখন নতুন আতঙ্কের নাম বজ্রপাত’। এমনিতেই নানা দুর্যোগে আক্রান্ত আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি না। প্রতিনিয়ত যুদ্ধকে জীবনের অংশ হিসেবে ধরে নিয়েই চলতে হচ্ছে। এমনিতেই করোনার বীভৎস তা-বে আমরা দিশাহারা। পাশাপাশি আছে খরা-বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস। এর সঙ্গে আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত। তথ্য মতে, গত বুধবার দেশে বজ্রপাতে ২০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এক দিনে এত মৃত্যুতে রীতিমতো আতঙ্কিত সবাই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি ছিল। গড় তাপমাত্রা বাড়ার আনুপাতিক হার ১৫ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি হলে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশে বজ্রপাতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে দেশে ৫ হাজার ৭৭২টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ক্রমাগত এর সংখ্যা বাড়ছে।

বজ্রপাত প্রকৃতি সৃষ্ট একটি অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ। এ দুর্যোগ রোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে হতে হবে দায়িত্ববান। তাহলে এই আতঙ্ককে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব। পৃথিবীর সব জায়গায় বৃক্ষই এর একমাত্র প্রাকৃতিক প্রতিষেধক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা প্রতিনিয়তই প্রকৃতিকে হত্যা করে চলেছি। বৃক্ষনিধন আমাদের জাতীয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে। ভোগবাদী চরিত্রের প্রতিভূ হয়ে দাঁড়িয়েছি আমরা। প্রকৃতি নিধনে আমাদের কোনো কৃপণতা নেই কিন্তু গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা শূন্যের কোঠায়। আমাদের এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনা গেলে কেবল বজ্রপাতই নয়, সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগই অনেকাংশে কমিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আনুপাতিক হারে শহরে বজ্রপাতে ক্ষতির সংখ্যা খুবই কম। কেননা এখানে প্রযুক্তি ব্যবহার সর্বত্র। ঘরে ঘরে বজ্রপাত নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থায় তা গড়ে উঠেনি। ওঠাও সম্ভব নয়। তাই এখানে প্রকৃতিই একমাত্র ভরসা। প্রকৃতিকে ভালোবেসে একে লালন করার মধ্য দিয়েই তা গড়ে তোলা সম্ভব। এর বাইরে সম্ভবত আর কোনো পথ খোলা নেই।

বজ্রপাতের কার্যকারণে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম বাতাসে জলীয়বাষ্প ঊর্ধ্বমুখী হয়ে মেঘের উষ্ণায়ন ক্ষমতাও অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গিয়ে জ্যামিতিক হারে মেঘের সৃষ্টি হয়। বাতাসের এই প্রক্রিয়া ওপর ও নিচে দুভাবে চলতে থাকে। একটি আপ ড্রাফ অপরটি ডাউন ড্রাফ। এই মেঘের নাম বজ্রমেঘ। মেঘেদের একটি পজিটিভ অপরটি নেগেটিভ। দুটি একত্র হলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়। শুরু হয় বজ্রপাত। এখানেও প্রকৃতি তার নিয়মেই কর্মটি সম্পাদন করে। প্রতিরোধের ক্ষমতা মানুষের নেই। ক্ষমতা প্রকৃতির হাতেই সীমাবদ্ধ। আর সে কারণেই প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়ার মধ্য দিয়েই পরিবেশকে স্থিতি রাখাই সেরা উপায়। মানব সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন এবং তা কার্যকর করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close