reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

চা বাগানের শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে হবে

বাংলাদেশে অবহেলার নিদর্শন দেখতে হলে যেতে হবে চা বাগান চত্তরে। যেতে হবে শ্রমিকদের জীবনযাপনের তথ্যচিত্রে। যেখানে পড়ে আছে বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস। বঞ্চনা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, চা বাগানের শিশুরা আজ খর্বকায় হয়ে বেড়ে উঠছে। এদের সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, সেখানকার মোট শিশুর ৪৫ শতাংশ। অপুষ্টির কারণেই এই ভয়াবহ দুর্যোগ কাঁধে নিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে জীবনের পুরো অংশ। তথ্য বলছে, পাঁচ বছর আগে মা হন কুলাউড়ার লুহাইনি চা বাগানের শ্রমিক সীমা উড়াং। সন্তান জন্ম দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে কাজে ফিরতে হয় তাকে। চা বাগানে কাজে ব্যস্ত থাকায় নিয়মিত মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত থাকে শিশু অনিল উড়াং। এ ছাড়া দুধের বিকল্প কোনো পুষ্টির জোগানও ছিল না শিশুটির জন্য। ফলে এর প্রভাব পড়ে তার বেড়ে ওঠায়। বয়স পাঁচে পড়লেও অনিলকে দেখতে এখনো দু-আড়াই বছরের শিশুর মতো। উচ্চতা দুই ফুটও অতিক্রম করেনি। বয়স অনুযায়ী উচ্চতা বাড়ছে না শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের শিশু কাজল পাল ও জলি রবিদাসের। এই চিত্র কেবল একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট চা বাগান এলাকার সর্বত্র। সিলেট বিভাগের চা জনগোষ্ঠী নিয়ে প্রথমবারের মতো আলাদা জরিপ করা হয় গত বছর। ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিবিএস পরিচালিত এ জরিপের ফলাফলে বলা হয়, চা বাগানের পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ খর্বকায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্প মজুরি, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবার অভাব ও মাতৃত্বকালীন সেবার অপ্রতুলতার কারণে পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন চাশ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। এর বেশির ভাগ প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। ফলে খর্ব ও শীর্ণকায় হয়ে বেড়ে উঠছে তারা। ইউনিসেফ বলছে, চা বাগানের ২৭ শতাংশ শিশু শীর্ণকায়। ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু স্বল্প ওজনের। তথ্য মতে, দেশে চা বাগান রয়েছে ১৬২টি। এর মধ্যে ১৩৮টিই সিলেট বিভাগে। আর চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। যৎসামান্য মজুরির কারণে জীবনমানের সব সূচকেই পিছিয়ে তারা। দুর্বল স্বাস্থ্য ও অপুষ্টিই তাদের প্রধান সমস্যা। তবে মালিকপক্ষের বক্তব্য বাস্তবতার বিপরীত। তাদের মতে, চা বাগানের শ্রমিকরা এখন অনেক ভালো আছে। বিপরীতে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক দফতরের অভিমত, অপুষ্টিই এখানকার প্রধান চ্যালেঞ্জ। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রদানের জন্য চা বাগানে কোনো সুবিধা নেই। পর্যবেক্ষণ বলছে, শ্রীমঙ্গলের ১০টি বাগানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, এখানকার নারীরা মাতৃকালীন তেমন কোনো সেবাই পায় না। ফলে বেশির ভাগ শিশু জন্ম থেকেই পুষ্টি সমস্যায় ভোগে। এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থা। তাই পুষ্টির অভাবে চা বাগানের শিশুদের মধ্যে খর্বকায় হওয়ার ঝুঁকিটাও প্রবল।

আমরা মনে করি, এ যাবৎকালের সবচেয়ে অবহেলিত, নিগৃহীত এই ক্ষুদ্র জনসমষ্টির দিকে দৃষ্টি ফেরানো আজ রাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্ব বলে বিবেচিত হওয়ার সময় এসেছে। শুধু রাষ্ট্র বা সরকারই নয়, বাগান মালিকদের এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে। আশা করি রাষ্ট্র এবং মালিকপক্ষ তাদের প্রতি মানবিক আচরণের মধ্য দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close