ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২৫ মার্চ, ২০১৮

নিবন্ধ

খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি

কৃষিনির্ভর দেশে যুগ যুগ ধরে কৃষিই ছিল অবহেলিত পেশা। এ পেশাকে মর্যাদাহীন বলে মনে করতেন সমাজের বিত্তবানরা। শিক্ষিতজনরা নাক সিঁটকাতেন কৃষিকাজ করার কথা ভেবে। দেরিতে হলেও কৃষিকে উপেক্ষা করার কা-জ্ঞানহীন প্রবণতার অবসান ঘটছে। শিক্ষিতজনরাও এগিয়ে আসছেন কৃষিকাজে। তাদের সৃজনশীল কর্মকা-ে আসছে সাফল্য।

মিডিয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে অন্য বন্ধুরা চাকরিযুদ্ধে নামলেও নিজে কিছু করার নেশায় ও পথে হাঁটেননি সোহেল রানা। নওগাঁর প্রত্যন্ত এলাকা সাপাহারে ‘রূপগ্রাম অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত কৃষি খামার। মাছ, ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট, দেশি মুরগি, কবুতর, পাখি, আম, লিচু, থাই পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগন, লেবু, প্যাসন ফল, পিচ ফল, জামরুল, খাটো জাতের নারিকেল, শাকসবজিসহ প্রায় ৪০ জাতের ফলের গাছ আছে। এ ছাড়া বাসক, তুলসী, কালোমেঘ, অর্শগন্ধা, ঘৃতকুমারীসহ নানা জাতের ঔষধিগাছও রয়েছে তার খামারে। কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে ফল ও ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে পড়াশোনা শেষ করে দেলোয়ার জাহান মানিকগঞ্জে দেড় একর জায়গায় কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। অনার্সে দ্বিতীয় ও মাস্টার্সে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলেন দেলোয়ার। এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগ পেয়েও যাননি। কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজে তো বিষ ব্যবহার করেনই না, অন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের। চুয়াডাঙ্গা সদরের তরুণ আলিমুজ্জামান ও ফিরোজুল হক দুজনই উচ্চশিক্ষিত তরুণ। আলিমুজ্জামান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন আর ফিরোজুল হক এমবিএ করে দুজনে মিলে ১০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। ঢাকা কলেজে মাস্টার্স পড়ার পাশাপাশি নিজের এলাকা রাজবাড়ীতে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন আমিরুল ইসলাম আমির। সুশিক্ষিত তরুণরা কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে অন্যদের জন্য শুধু দৃষ্টান্তÍ স্থাপনই করেননি, বিষমুক্ত চাষাবাদের যে পথ তারা বেছে নিয়েছেন, তা সবার জন্য অনুকরণীয়। দেশের কৃষির বিকাশে প্রতিভাবান শিক্ষিত তরুণদের অংশগ্রহণ পর্যন্ত ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বাঙালির জীবন-জীবিকায় কৃষিই সব। কৃষিকাজে সম্পৃক্ত অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী। সারা বছর বীজ বুনে, ফসল ফলায় আবার কর্তন করে গোলা ভরে কিংবা বেচাকেনায় হয় নিমগ্ন। এক মণ ধান বেচে সংসারের জন্য দরকারি জিনিস কেনা বাঙালি মধ্যবিত্ত কৃষকের পুরোনো চর্চা। তবে ভূমিহীন কৃষকের পক্ষে যা দুষ্কর। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু কৃষিজমি বাড়ছে না। ফলে উৎপাদন চাহিদার জোগান দিতে পারছে না। এমনিতে কৃষিজমি সুরক্ষিত নয়। স্থাপনা-সড়ক ইত্যাদিতে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। এক ফসলি বা তিন ফসলি জমির পরিমাণ বাড়ছে না। কিন্তু চাষাবাদ বন্ধ করে কলখারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, ইটভাঁটাসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব জমি। ফলে আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে। ফসলি জমিকে অন্য কাজে ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। তীব্র হবে খাদ্য সংকট। তা নিরসনে হতে হবে আমদানিনির্ভর। ব্যয় হবে বিদেশি মুদ্রা, যা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সহায়ক নয়।

দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। স্বল্প পরিমাণ জমিতে অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সংগত। এ জন্য কৃষি গবেষণার কাজে মনোযোগী হতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর জন্য কৃষিতে ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। শিক্ষিতরা কৃষিকাজকে যাতে অপছন্দ না করে সে জন্য তাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় কৃষির ব্যবহারিক শিক্ষা থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কৃষি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষাপাঠ্যক্রমে থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, মাটিতে হাত দিয়ে চারা রোপণ করলে বা কাজ করলে লজ্জার কিছু নেই। বরং নিজের হাতে বাগান করলে; সেই বাগানে যখন একটা ফল হয়, সেটা ছিঁড়ে খেতে আরো বেশি গর্ববোধ হয়। বাড়ির ছাদে বাগানচর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে শহর, গঞ্জ, গ্রামেও। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার কাজ বিস্তৃত হলে ফসল উৎপাদন বাড়বে। অব্যবহৃত জমি সমবায়ের ভিত্তিতে আবাদ করা গেলে খাদ্যাভাব হ্রাস পাবে। জমি চাষ, ফসল কাটা, ফসল আলাদা করা সবই মেশিন দিয়ে করা গেলে উৎপাদনশ্রম হ্রাস পাবে। পাশাপাশি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা জরুরি। নতুন প্রজন্মকে কৃষিকাজে আগ্রহী করে তোলা গেলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে দেশ। অর্থনীতি কৃষিনির্ভর যে দেশ, সে দেশে কৃষিকে গুরুত্বহীন পর্যায়ে রাখা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ করা গেলে কৃষি থেকে ধীরে ধীরে শিক্ষায়ও উন্নত হবে দেশ। কৃষিই দেবে কাঁচামালের জোগান। সমাজজীবনের প্রতিটি স্তরে কৃষিকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে, যাতে এ খাত স্বনির্ভর থাকে সব সময়।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist