অবিশ্বাস্য বর্বরতা
সীমা লঙ্ঘন যেন কোনো বিষয়ই নয়। এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে না। যানজট সীমাকে লঙ্ঘন করেছে। বায়ুদূষণ সীমাকে লঙ্ঘন করেছে। শব্দদূষণও পিছিয়ে নেই। নদী দখল, খাল দখল, জমি দখল তো অনেক আগেই সীমা লঙ্ঘনের শেষ সীমাকে অতিক্রম করে সমাজের চোখে-মুখে কালিমা লেপন করে বলছে, আমাদের দিকে তাকাও। আমাদের মতো ক্ষমতাবান আর কে আছে? আমাদের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে তোমরা কতটুকু ভালো থাকবে।
এখানেই শেষ নয়। সীমা লঙ্ঘনের তালিকাকে আরো দীর্ঘ করা যেতে পারে। খাদ্যে ভেজাল এ দেশে এখন আর কোনো ঘটনাই নয়। আমরা কী খেয়ে বেঁচে আছি, তা নিয়ে এখন গবেষণা হতে পারে। সীমা লঙ্ঘনের দিক থেকে এর অবস্থানও তালিকার উপরের দিকেই থাকার কথা। শিক্ষার কথা না বললেই নয়। অনৈতিক কর্মকান্ডে গোটা ব্যবস্থা এখন এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, যাকে ব্যবস্থা না বলে অব্যবস্থা বলাই শ্রেয়। যেখানে কোনো ব্যবস্থাই আর কাজে আসছে না। তালিকায় আরো যোগ হতে পারে সীমা লঙ্ঘনকারীদের নাম। তাতে তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। সীমা লঙ্ঘনের পরিসরও দীর্ঘায়িত হবে। আমাদের নিরাপত্তা কেবল আনুপাতিক হারে সঙ্কুচিতই হতে থাকবে। সঙ্কুচিত হতে হতে একসময় তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। আর যারা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেনÑস্ফীত হয়েছে তাদের সম্পদ।
এ এক অদ্ভুত যোগাযোগ। নিরাপত্তা যত বিঘিœত হবে, নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিতদের সম্পদ তত স্ফীত হবে। ইতিহাস সে কথাই বলে। অনেকের মতে, এ আচরণকে কখনই স্বাভাবিক বলা যাবে না। একে বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তুলনা করা যায় ছিনতাইকারীদের পৈশাচিক বর্বরতার সঙ্গে। যে বর্বরতা ঘটে গেল গত শুক্রবার ভোরে ঢাকার রাজপথে। অবিশ্বাস্য বর্বরতা প্রাণে মারল দুজনকে। বরিশাল থেকে লঞ্চে এসে ভোর সাড়ে ৫টায় গ্রিন রোডের বাসায় ফিরছিলেন হেলেনা বেগম। ধানমন্ডি ৭ নম্বর সড়কের মাথায় রাস্তা পার হওয়ার সময় পাশ দিয়ে যাওয়া প্রাইভেট কার থেকে একজন তার ব্যাগ ধরে টান দিলে হেলেনা রাস্তায় পড়ে যান। হাত আটকে যায় ব্যাগে। দ্রুতগতির গাড়িটি তাকে কিছুদূর টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে চাকার নিচে পিষ্ট হয় হেলেনার মাথা। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। একই দিনে ঢাকার টিকাটুলীতে ছিনতাইকারীর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন মো. ইব্রাহিম।
বর্বরতার যেন শেষ নেই। অসংখ্য বর্বরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ছিনতাইকারীদের হত্যাযজ্ঞ। ক্রমশই যেন এ ধরনের কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। আমরা মনে করি, নামে-বেনামে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সম্পদ বৃদ্ধিকে সঙ্কুচিত করা গেলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকার সুযোগ পেত। ইতোমধ্যে চেষ্টা হয়েছে অনেক। কিন্তু সে চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি। তাই আমাদের এ পরামর্শ কাজে লাগানো যায় কি না কর্তৃপক্ষ একবার ভেবে দেখতে পারে।
"