প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ এপ্রিল, ২০২৪

৭৮৭ ড্রিমলাইনারে গুরুতর ত্রুটি সব বিমান গ্রাউন্ডেডের পরামর্শ

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের সব বিমানে গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিমান প্রস্তুত খাতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি বোয়িংয়ের সাবেক কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার স্যাম সালেহপৌর। এই সিরিজের সব বিমান গ্রাউন্ডেড করে ত্রুটি সারানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। ১৭ নভেম্বর বুধবার বিবিসির মার্কিন অংশীদার সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোয়িংকে অবিলম্বে এই ত্রুটি সারানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে স্যাম সালেহপৌর বলেন, খরচ বাঁচানোর জন্য বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলো প্রস্তুতের ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তি অবলম্বন করেছে কোম্পানি, তা ত্রুটিযুক্ত। সালেহপৌরের দাবি, সিরিজের বিমানগুলোর যন্ত্রাংশ বা ফিউসেলেজগুলোর সন্নিবেশন ঠিকমতো হয়নি; প্রতিটি ফিউসেলেজ জয়েন্টের মধ্যে সামান্য ফাঁক রয়ে গেছে।

এনবিসিকে বোয়িংয়ের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিক গতিতে বিমান চালানো হলে এই ত্রুটি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না; কিন্তু যদি গতি বাড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে বায়ুচাপ এবং বিমানের ইঞ্জিনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার ক্ষেত্রে ফিউসেলেজ জয়েন্টগুলো ব্যর্থ হবে এবং তার পরিণতি হবে গুরুতর। এমনকি এ ধরনের পরিস্থিতিতে মাঝ আকাশে বিমান ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আমার পেশাগত জীবনে যতগুলো ঘটনা নিয়ে আমি গুরুতর দুশ্চিন্তা করেছি, সেসবের মধ্যে এটি একটি। এবং আমি (বোয়িং কোম্পানিকে) আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই যে এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের যতগুলো উড়োজাহাজ অপরেশনে রয়েছে, সবগুলো পরীক্ষা করা হোক এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রুটি সারানো হোক।

প্রসঙ্গত, ১৯১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরে প্রতিষ্ঠিত বোয়িং কোম্পানি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। পরে কোম্পানির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্লিংটনে স্থানান্তর করা হয়।

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার হলো দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাঝারি আকারের সুপরিসর উড়োজাহাজ। ২০১১ সালে এই সিরিজের বিমান প্রথম বাজারে আনে বোয়িং। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ড্রিমলাইনার সিরিজের ১ হাজার ১শ’রও বেশি উড়োজাহাজ যাত্রী পরিষেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এই সিরিজের ৬টি উড়োজাহাজ রয়েছে। উড়োজাহাজগুলোর নাম আকাশবীণা, গাঙচিল, সোনার তরী, হংস বলাকা, রাজহংস এবং অচিন পাখি।

ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলোর ফিউসেলেজ জয়েন্টগুলোতে ঠিক কী ধরনের ত্রুটি রয়েছে- জানতে চাইলে স্যাম সালেহপৌর বলেন, উড়োজাহাজের ফিউসেলেজের জয়েন্টগুলোর ফাঁক পূরণের জন্য ছোটো ধাতব টুকরো ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে এসব টুকরোকে বলা হয় ‘শিমস’। ড্রিমলাইনার সিরিজের উড়োজাহাজগুলো প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাত্রায় শিমসের ব্যবহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

আপাতভাবে ছোটো মনে হলেও এটি বেশ গুরুতর একটি ত্রুটি। কারণ প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিমস না থাকার কারণে অপারেশনের সময় বিমানের ফিউসেলেজগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, দুর্ঘটনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি উড়োজাহাজের জীবনকালও (লাইফস্প্যান) কমিয়ে দিচ্ছে।

সালেপৌর জানান, ড্রিমালাইনার সিরিজের বিমানগুলো প্রস্তুতের সময় এই ত্রুটি সম্পর্কে তিনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন এবং এটি সারানোর সুপারিশও করেছিলেন; কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাতে আমল না দিয়ে প্রথমে স্যাম সালেহপৌরকে ড্রিমলাইনার প্রকল্প থেকে বাদ দেয় এবং পরে চাকরিচ্যুত করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close