আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনে পুতিনের সমালোচক রুশ সাংবাদিককে হত্যা
ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সমালোচক খ্যাতনামা এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা ৪১ বছর বয়সী আরকাদি বাবচেঙ্কোকে তার স্ত্রী বাসার ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করেন বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে কিয়েভ পুলিশ। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। গুরুতর আহত বাবচেঙ্কোকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পেশাদারি কর্মকা-ের কারণেই বাবচেঙ্কোকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
চেচনিয়ার যুদ্ধে অংশ নেওয়া সাবেক এ রুশ সৈন্য নিজ দেশে যুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য পরিচিত ছিলেন। ইউক্রেন ও সিরিয়া নিয়ে রাশিয়ান নীতির সমালোচনা করার পর গত বছর দেশ ছেড়ে পালান ‘জীবন নিয়ে ভীত’ বাবচেঙ্কো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিরিয়ার আলেপ্পোতে রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ ও ইউক্রেনে মস্কোর কর্মকা-কে ‘আগ্রাসন’ অ্যাখ্যা দিয়ে সরকারপন্থী রাজনীতিবিদদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
‘প্রথমত এবং সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে, তার (বাবশেঙ্কো) পেশাদারি কর্মকা-,’ রুশ সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা প্রসঙ্গে টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন কিয়েভের পুলিশ প্রধান আন্দ্রি ক্রিশচেঙ্কো।
বাবচেঙ্কোর স্ত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তার সঙ্গে পুলিশ কথা বলতে পারেনি বলেও জানান আন্দ্রি। ধূসর দাড়ি ও ক্যাপপরিহিত সন্দেহভাজন খুনির একটি আঁকা ছবিও প্রকাশ করেছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ, যার বয়স ৪০ থেকে ৪৫-এর মধ্যে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
দুই বছর আগে কিয়েভের কেন্দ্রে এক গাড়িবোমা বিস্ফোরণে বেলারুশের এক সাংবাদিকও নিহত হয়েছিলেন। পাভেল শেরেমেত নামে ওই সাংবাদিক বেলারুশের ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের কট্টর সমালোচক এবং রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা বরিস নেমতসভের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
‘যাদের ভয় দেখানো কিংবা ভেঙে ফেলা যাবে না, পুতিন সরকার তাদেরই লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে,’ কিয়েভে রুশ সাংবাদিক খুনের পর ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো।
তিনি জানান, ঘরে রুটি ফুরিয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার কাছাকাছি দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন বাবচেঙ্কো, ফেরার পর বাড়িতে ঢোকার সিঁডিতে অপেক্ষা করা সন্দেহভাজন খুনি তাকে পেছন থেকে বেশ কয়েকটি গুলি করে। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ‘ইউক্রেনে সাংবাদিক হত্যাকা-ে জড়িতরা দায়মুক্তি পাচ্ছে’ বলে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘রক্তাক্ত অপরাধ ও সম্পূর্ণ দায়মুক্তি কিয়েভ সরকারের দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়েছে। ঘটনাটির দ্রুত তদন্তে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমরা,’ ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থাও বাবচেঙ্কোর মৃত্যু নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
চেচনিয়ার যুদ্ধে সৈন্য হিসেবে অংশ নেওয়া বাবচেঙ্কো পরে বেশ কয়েকটি রুশ গণমাধ্যমের যুদ্ধবিষয়ক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দেশ ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন। সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঠিকাদার পাঠানো এবং ২০১৪-র জুলাইয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মালয়েশীয় বিমান এমএইচ-১৭ ভূপাতিত করার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন বাবচেঙ্কো।
গত সপ্তাহে পশ্চিমা একটি তদন্ত দলও এমএইচ১৭ বিধ্বস্তে রাশিয়ার দায় আছে বলে মন্তব্য করেছে।
ইউক্রেনের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় মালয়েশীয় বিমানটির ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।
"