নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুলাই, ২০১৭

নিখোঁজ ফৌজিয়ার কল রেকর্ডে ‘সন্দেহজনক কিছু’ পায়নি পুলিশ

দুই সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ঢাকার ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক ফেরদৌসি একরাম ফৌজিয়ার ‘উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা’ নিয়ে ফেসবুকে কথা চালাচালি হলেও সেই সন্দেহের কোনো ভিত্তি খুঁজে পায়নি পুলিশ। কলাবাগান থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত খান বলেছেন, ফৌজিয়ার কল রেকর্ড ও ফেসবুক আইডির তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই শিক্ষিকার জঙ্গিবাদে জড়ানোর কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা ফৌজিয়া ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষক হিসেবে ম্যাপল লিফে যোগ দেন। পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ৩০ বছর বয়সী এই নারী গত ২ জুলাই সন্ধ্যায় এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে গ্রিন রোডের বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সেদিন নিজের মোবাইল ফোনটি রেখে গিয়েছিলেন ফৌজিয়া। তার খোঁজ না পেয়ে ওই রাতেই আশপাশের হাসপাতাল, স্থানীয় থানা ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেন ফৌজিয়ার বাবা মো. একরাম। পরদিন কলাবাগান থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ফৌজিয়া যখন বাসা থেকে বের হন, তখন ওই বাড়ির তিন নিরাপত্তাকর্মীর মধ্যে দায়িত্বে ছিলেন ঈমান হোসেন। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম হিজাব পরে চলাফেরা করতেন। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা করে স্কুলে যেতেন, আবার সন্ধ্যার দিকে রিকশায় করেই ফিরতেন।’

দুই সপ্তাহেও তার খোঁজ না মেলার বিষয়টি জানিয়ে কলাবাগানের ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘ফেসবুক ও অনলাইনে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু এসবের কোনো ভিত্তি নেই। তার ফোনের কল রেকর্ড সংগ্রহ করে আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। সেসব স্বাভাবিক ও সাধারণ প্রয়োজনীয় আলাপচারিতা। উগ্রপন্থায় যাওয়ার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ধর্মীয় পোশাকের’ কারণেই স্কুল শিক্ষক ফৌজিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে ‘নেচিবাচক’ আলোচনা হয়েছে বলে তার ধারণা। তবে তার চাকরির ওপর পরিবারটি অনেকখানি নির্ভরশীল। তিনি পরিবারের বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।

নিখোঁজের পর থেকে ফৌজিয়ার আত্মীয়-স্বজনের বাসা ও পরিচিত বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা এই নিখোঁজের তথ্যটি দিয়েছি। যেন তার সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এভাবে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি এখনো আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।’

গ্রিন রোডের আট তলা ওই ভবনের পঞ্চম তলায় বাবা-মা, এক ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে বসবাস করতেন ফৌজিয়া। সেখানে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী আবদুল মান্নান বলেন, স্বজনরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে আগেই জানিয়ে রেখেছেন। কেউ আসলে উপরে যেতেও মানা করেছেন। নিখোঁজের সব তথ্য পুলিশের কাছে দেওয়া আছে, সেখান থেকে নিতে বলেছেন।’

এই শিক্ষকের নিখোঁজ থাকার বিষয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার তিন ঘণ্টা বাসার নিচে অপেক্ষার পর নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে চিরকুট পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফৌজিয়ার বাবা মো. একরামও ফোন ধরেননি।

ধানমন্ডিতে ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের তিনটি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ৭/এ রোডের শাখায় গণিত পড়াতেন ফৌজিয়া। ওই শাখার তত্ত্বাবধায়ক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফৌজিয়া ‘উগ্রপন্থার’ সঙ্গে জড়িত হতে পারেন বলে তিনি মনে করছেন না। তরুণ এই শিক্ষক সুস্থ অবস্থায় ফিরে আবারও কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবেন, সেটাই তার প্রত্যাশা।

তিনি আরো বলেন, ‘গত আড়াই বছর ধরে আমাদের এখানে গণিত পড়িয়ে আসছেন উনি। শিক্ষক হিসেবেও তিনি খুব কর্তব্যপরায়ণ। আমাদের এখানে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তার দায়িত্ব, এরপর আরেকটি স্কুলে খ-কালীন শিক্ষকতা করতেন বলে শুনেছি।’ আসাদুজ্জামান বলেন, ঈদের ছুটি শেষে গত ৩ জুলাই থেকে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলে ওইদিন ফৌজিয়া স্কুলে যাননি। ফোন দিলে প্রথমে কেউ না ধরলেও পরে তার ছোট বোন কলব্যাক করে বলেন, ফৌজিয়া অসুস্থ। ৪ জুলাই বিকেলে আবার তার পরিবার থেকে ফোন করে আমাকে বলে, ‘স্যার ওর একটা সমস্যা হয়েছে, আপনি একটু দেখেন, অনুপস্থিতির কারণে চাকরিটা যেন না যায়। ওর স্কুলে যেতে আরো কয়েক দিন লাগবে’।

এরপর ৬ জুলাই রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফৌজিয়ার নিখোঁজ থাকার বিষয়টি জানানো হয় বলে আসাদুজ্জামান জানান।

তিনি বলেন, ‘কীভাবে উনি নিখোঁজ হলেন- বুঝতে পারছি না। তার মধ্য কোনো উগ্রপন্থি আচরণ দেখিনি। আমরা অপেক্ষায় আছি, তিনি সুস্থ অবস্থায় আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবেন। আগের মতো আবার ক্লাসে উপস্থিত হবেন।’ ফৌজিয়ার বাবা মো. একরাম ম্যাপল লিফের অন্য একটি শাখায় খন্ড কালীন শিক্ষকতা করেন। তার আরেক বোনও এই স্কুলের ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist