রকিবুল আফ্রিদি, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ)

  ২৪ মার্চ, ২০২৪

গোপালগঞ্জ

ইঁদুরের লেজে ১০ টাকা...

বোরো মৌসুমে আবাদ করা বিভিন্ন প্রকার ধান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কৃষকের প্রধান ফসল। ইঁদুর বোরো খেতের ধান গাছ কেটে নষ্ট করছে। খেতে কৃষকরা বিষমাখা টোপ, আতপ চালের টোপ এবং ফাঁদ পেতেও ইঁদুর নিধনে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাই ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকের দুশ্চিন্তা ও হতাশা বাড়ছে। তবে ইঁদুরে কত জমির ফসল নষ্ট করেছে তা নিরূপণের কাজ শুরু করতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বোরো আবাদ শেষে খেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। কীটনাশক প্রয়োগ করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তারপরই শুরু হয়েছে ইঁদুরের উৎপাত। উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুড়তিয়া বিল, পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গার বিল, গোপালপুর বিলসহ কয়েকটি বিলের ধান গাছের নিচের অংশ খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর। ইঁদুরে কাটা গাছ মারা যাচ্ছে।

ফসল রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য নানা প্রকার পরামর্শ দিচ্ছে। ইঁদুর দমনে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছেন ওই অধিদপ্তর। আগামী ৩০ চৈত্রের মধ্যে ইঁদুর মেরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসে লেজ জমা দিলেই লেজপ্রতি ১০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৯২০ টন।

গিমাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, টুঙ্গিপাড়া বিল বেষ্টিত। এখানে এক ফসলি বোরো ধানের জমি বেশি। বোরো ধানই আমাদের প্রধান ফসল। বোরো রোপণের পর পোকার আক্রমণ হয়। সেটি কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখন ইঁদুরের উপদ্রব শুরু হয়েছে। ধান রক্ষায় বাঁশের কঞ্চি গেড়ে তাতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছি। আবার অনেকে খেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। কেউ কেউ খাবারে বিষ মিশিয়ে খেতের চারপাশে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ইঁদুর ধান গাছের গোড়া কেটে দিচ্ছে। এতে গাছ মারা যাচ্ছে। ইঁদুর নিধনে আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি।

পাকুড়তিয়া গ্রামের চাষি মিলু মুন্সী বলেন, চার বিঘা জমিতে গত বছর ২০০ থেকে ২৫০ মণ ধান পেয়েছিলাম। সেই জমিতে এবার ১০০ থেকে ১৫০ মণ ধানও হবে না।

ধানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আশার আশঙ্কা করছি। ইঁদুর আমাদের সব শেষ করে দিচ্ছে।

গোপালপুরের কৃষক বরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এখন বোরো ধানের শীষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও ইঁদুর দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই কষ্টের ফসল রক্ষায় দুশ্চিন্তায় আছি। এই ফসল রক্ষা করতে না পারলে সারা বছর চাল কিনে খেতে হবে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ইঁদুর দমনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে মতবিনিময় সভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা ইঁদুর দমনের নতুন কৌশলের মেসেজ পৌঁছে দিচ্ছি। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, কৃষকদের ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করছি। আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ইঁদুরের লেজপ্রতি ১০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লেজের হিসাব রাখবেন। ৩০ চৈত্রের পরে কৃষকের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ইঁদুর কত বিঘা জমির ধানের ক্ষতি করেছে সেটা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close